রাজ্যে যখন তারা শাসকদল ছিল, সভা-সমাবেশে আসা সমর্থকদের জন্য থাকত মাছ-মাংসের দেদার আয়োজন। ব্রিগেডের সমাবেশে তো বিরিয়ানিও মিলত। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর বছর পাঁচেক পরেই দুর্গাপুরে সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি খাবার, জল চাইছে সিপিএম। পরিস্থিতির চাপে ফের সাতের দশকের অভ্যাসে ফিরে যাচ্ছেন দলের নেতারা। তবে এর মাধ্যমে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।
তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে শহর জুড়ে লাগাতার আন্দোলনের জন্য মূলত সিপিএমের উদ্যোগে ১৩টি বাম সংগঠনকে নিয়ে যৌথমঞ্চ গড়া হয় ২০১৫ সালের জুনে। বেহাল পুর পরিষেবার অভিযোগে শহর জুড়ে সই সংগ্রহ করা হয়। কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে পুরসভার সামনে স্মারকলিপি দিয়েছিল যৌথ মঞ্চ। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্গাপুরে ফল ভাল হয় বামেদের। শহরের দু’টি আসনই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। সামনের বছর শহরে পুরভোট হওয়ার কথা। সে দিকে লক্ষ রেখে ২১ নভেম্বর ফের পুরসভা অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেরা।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা অভিযানের আগে শহরের একশো কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করা হবে। মিছিল করে মানুষের কাছে দাবিদাওয়া তুলে ধরা হবে। পুরসভার বিরুদ্ধে বেহাল পরিষেবা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও বন্ধ কারখানা খোলা, নতুন কারখানা তৈরি, আইনের শাসনের দাবি তোলা হবে। ১৩ নভেম্বর জেমুয়া থেকে শুরু করে এমএএমসি টাউনশিপ, বিধাননগর, মুচিপাড়া, সগড়ভাঙা, শ্যামপুর, ডিপিএল কলোনি, ডিভিসি মোড় হয়ে মোট ১৫টি ওয়ার্ড পরিক্রমা করে ২১ নভেম্বর মিছিল পৌঁছবে পুরসভায়।
সিপিএম নেতাদের দাবি, গত দু’বছরে দলীয় সভা-সমিতিতে মানুষের ঢল নেমেছে। বিধানসভার ভোটবাক্সেও তার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। কাজেই এ বারের ‘লং মার্চ’ও সফল হবে বলে তাঁদের আশা। মিছিলে যোগ দেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার শেষ কয়েক বছরে শহরে সিপিএমের বহু সভা-সমিতিতেই খাবারের ভাল প্যাকেট পেতেন কর্মীরা। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। এখন বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতারা সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মিছিলে যোগ দেওয়া অন্তত এক জনের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করার আর্জি জানাচ্ছেন। আর দিনের জন্য দু’টি ঠোঙায় দু’মুঠো চাল ও এক মুঠো ডাল চেয়ে নিচ্ছেন। সঙ্গে কিছু সবজি জোগাড় করে রান্নার ব্যবস্থা হবে।
সিপিএম নেতাদের দাবি, সাহায্য করতে ইতিমধ্যে প্রায় দু’হাজার পরিবার এগিয়ে এসেছেন। দলের প্রবীণ কর্মীরা জানাচ্ছেন, ক্ষমতায় আসার আগে পার্টির হাতে অর্থ ছিল না। সাহায্য চেয়ে পার্টির কাজকর্ম চলত। চেয়েচিন্তে জোগাড় করে সভা-সমিতিতে আসা পার্টির কর্মীদের জন্য রুটি-তরকারি রান্না করা হতো। সাতের দশকের সেই পথই এ বার অনুসরণ করছেন দুর্গাপুরের নেতারা।
সিপিএম নেতাদের আরও দাবি, দলের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগ আর আগের মতো নেই। বারবার সেই অভিযোগ উঠছে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খাবার সংগ্রহের মাধ্যমে বাসিন্দাদের সঙ্গেও একাত্ম হওয়ার সুযোগ মিলবে, জনসংযোগ ঝালিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘বাড়ি-বাড়ি পৌঁছনোর কোনও সুযোগই আমরা ছাড়তে চাই না। বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমরা তা করে থাকি। এটা তেমনই আর একটা সুযোগ।” তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘কালে কালে কত কী দেখতে হবে! ক্ষয়িষ্ণু একটা দল প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য আর কী-ই বা করতে পারে!’’