প্রতীকী ছবি।
আদিবাসীরা মুখ ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের পরিসংখ্যান নিয়ে নাড়াচাড়া করলে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকে আদিবাসী-মন কিছুটা হলেও ফিরেছে বামে। তৃণমূল, বিজেপি যদিও এই পরিসংখ্যানে আমল দেয়নি।
কাঁকসা ব্লকে সাতটি পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ত্রিলোকচন্দ্রপুর, বনকাটি, মলানদিঘি, গোপালপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু আদিবাসী গ্রাম। ব্লকে প্রায় ৭৫টি আদিবাসী গ্রাম রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এক সময় পুরো কাঁকসা ব্লকেই আদিবাসীরা একতরফা ভাবে বামেদেরই ভোট দিতেন। কাঁকসা ব্লকের যে কোনও ভোটে সিপিএম তথা বামের মূল শক্তিই ছিলেন আদিবাসী মানুষজন। এমনকি, ২০১১-এ পালাবদলের বিধানসভা ভোটেও কাঁকসায় বামেদের আদিবাসী ভোটে সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি তৃণমূল। যদিও, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দেখা যায়, আদিবাসী ভোটের বড় অংশ চলে গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। ২০২১-এও একই প্রবণতা দেখা যায়। আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। বামেরা নেমে আসে তৃতীয় স্থানে। তৃণমূল ছিল দ্বিতীয় স্থানে।
কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে অন্য চিত্র দেখা গিয়েছে বলেই ভোট পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে। যে সব বুথে আদিবাসী ভোটারের সংখ্যা বেশি, সে সব বুথে হয় সিপিএম জিতেছে। না হয়, তারা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রায় সর্বত্রই তিনে চলে গিয়েছে বিজেপি।
উদাহরণ হিসেবে বেছে নেওয়া যায়, ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের ধোবারু গ্রামের কথা। এখানে মোট ভোটার ৬৬৪ জন। এর মধ্যে ৩০৬ জন আদিবাসী। এ বার ভোট পড়েছিল ৫৩৯টি। সিপিএম ২১৮টি, তৃণমূল ১৬৭টি ও বিজেপি ১০২টি ভোট পেয়েছে। সিপিএমের দাবি, অধিকাংশ আদিবাসী ভোটার ও গরিব মানুষের ভোট পেয়েছেন তাঁদের প্রার্থী। আবার ওই পঞ্চায়েতেরই সুন্দিয়ারা আসনে তৃণমূল জিতেছে। সেখানে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৩৬৯টি, সিপিএম পেয়েছে ২৮২টি ও বিজেপি পেয়েছে ৮১টি ভোট। এখানে আদিবাসী ভোটারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশো। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও দাবি, এলাকার আদিবাসী ভোটের বড় অংশই গিয়েছে সিপিএমের দিকে।
কিন্তু কী ভাবে আদিবাসীদের মন ‘ফিরল’? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার, জীবন-জীবিকার নানা প্রশ্নে তাঁদের আন্দোলনের ঝাঁঝ বেড়েছে। পাশাপাশি, এই জায়গাগুলিতে সংগঠনেও বিশেষ নজর দিয়েছিলেন তাঁরা। এ সবেরই সুফল মিলেছে। বীরেশ্বরের তার পরেও অবশ্য অভিযোগ, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে অনেক জায়গাতেই আদিবাসীরা ভোট দিতে পারেননি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
এ দিকে, তাঁরা কেন তলানিতে, সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি বিজেপির বর্ধমান (সদর) সহ-সভাপতি রমন শর্মা। তবে তাঁর সংযোজন: “আদিবাসী মানুষেরা আমাদের সঙ্গেই আছেন, লোকসভা ভোটে সেটা বোঝা যাবে।” পাশাপাশি, তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “কিছু আদিবাসী মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন। কিন্তু আদিবাসীদের অনেক প্রার্থীই তৃণমূলের হয়ে জিতেছেন। তবে অদিবাসীদের যে অংশ এখনও সিপিএমের সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের সমর্থন যাতে আমাদের দিকে আসে, সে জন্য সাংগঠনিক ভাবে চেষ্টাকরা হবে।”