আউশগ্রামে মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে খুন হয়েছিলেন আউশগ্রামের সিপিএম কর্মী রাজিবুল হক। বৃহস্পতিবার তার স্মরণসভায় মূল আসামীকে গ্রেফতারের দাবিতে চন্দ্রাভিযানের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা, দুর্নীতি, নেতাদের তলব নিয়ে আক্রমণ করেন তৃণমূলকেও।
বিষ্ণুপুরে ওই সভায় সেলিম বলেন, “আমাদের বিজ্ঞানীরা, প্রযুক্তিবিদরা এমন যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারেন, যা চাঁদে গিয়ে কোথায় জল আছে, কোথায় বরফ আছে, কোথায় পাথর আছে, সেই সব খবর নিতে পারে। আর কোথায় রাজিবুলের খুনি বসে আছে, সেটা খোঁজ নিতে পারে না। আমরা রাজিবুলের খুনিদের শেষ বিচার অবধি থাকব। কেউ পার পাবে না। দরকার হলে আমরা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।’’ পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামি এখনও খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন আউশগ্রামের অমরপুর অঞ্চলের বিষ্ণুপুর গ্রামে ভোটকেন্দ্রের মধ্যেই তৃণমূল সিপিএম সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন কয়েক জন। ভোটের দিন মৃত্যু হয়েছিল বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা জখম সিপিএম কর্মী রাজিবুল হকের। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক রাজিবুলের সূত্রেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে দোষেন সেলিম। তিনি দাবি করেন, বাংলায় কাজ না থাকায় রাজিবুলের মতো বহু ছেলেমেয়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে যাচ্ছে। যখন কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই জানা যায় তাঁদের কথা। তিনি বলেন, ‘‘যখনই কেউ মারা যায়, তখন সরকার কিছু ঘোষণা করে বলে, আলাদা একটা চেয়ারম্যান করেছি, বোর্ড করেছি। কিন্তু কী করছে? কোন আইন আছে? সংবিধান অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকারের। আর রাজ্য সরকারের আইন আছে। কে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে ,তাদের রেজিস্ট্রেশন দরকার।’’
পুলিশকে ‘অপদার্থ, নিষ্ক্রিয়’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সেলিম বলেন, ‘‘রাজিবুলকে যারা খুন করেছে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ এতটাই অপদার্থ। দেখা গিয়েছে, উপরতলার প্রশাসনের সঙ্গে যে খুনি তারা একসঙ্গে জন্মদিনের পার্টি করছে, তার গাড়িতে চড়ে ব্লকের অফিসার, এসডিপিও থেকে উপরতলার অফিসারেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরাধীর পকেটে আইসি। কারণ বালির টাকা।’’ জঙ্গলের লুট এবং নদী লুটের টাকা বন্ধ করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
পুলিশ অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেনি। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বীরেন্দ্রকুমার পাঠক বলেন, ‘‘ওই খুনের ঘটনায় ১৯ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।’’
আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, ‘‘নির্বাচনের ফলাফলে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা সিপিএমের কথাকে গুরুত্ব দেয় না। করোনা পরিস্থিতির সময় মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কী করেছেন, তা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন। সেই সময় সিপিএম ঘরে খিল এঁটে ঘুমোচ্ছিল।’’ সভা শেষে রাজিবুলের পরিবারের হাতে দু লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন সেলিম।