ফাইল চিত্র।
শিক্ষক ‘নিয়োগে’ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এই আবহে বিরোধী পরিসর যেমন নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া বিজেপি, তেমনই নিজেদের এ রাজ্যে তৃণমূল-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টায় কসুর করছে না বাম-কংগ্রেস। ‘নিয়োগ কেলেঙ্কারি’-কে হাতিয়ার করে কাটোয়ায় পথে নেমেছে বাম ও বিজেপি। ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ কর্মসূচি নিয়ে আগামী মাসের প্রথমেই বুথ স্তরে কর্মীরা পথে নামবেন বলে জানিয়েছেন কাটোয়া বিজেপি সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব।
গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে কাটোয়া ও দাঁইহাট শহর ছাড়াও, মহকুমার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় ভাল করেছিল বিজেপি। তবে বিধানসভা উপ-নির্বাচন এবং পুরভোটে অনেক জায়গায় তাদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বামেরা। একই চিত্র কাটোয়াতেও। বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন, বুথস্তরের কর্মীদের চাঙ্গা করার এটাই মোক্ষম সুযোগ। সে লক্ষ্যে দলের সব ক’টি গণসংগঠনকে রাস্তায় নামাতে চাইছেন তাঁরা। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘নানা কারণে দলীয় কর্মীরা কার্যত উৎসাহ হারিয়েছেন। পুরভোটের পরে, কাটোয়া ও দাঁইহাট শহরের বিজেপি কর্মীদের বড় অংশ বসে গিয়েছেন। এখনই তাঁদের সক্রিয় করা না গেলে, পঞ্চায়েত ভোটে দলের ফল খারাপ হতে পারে। তৃণমূলের নানা দুর্নীতির কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে বুথকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি প্রচারে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
দিন দু’য়েক আগে, দাঁইহাট শহরে মিছিল করে বিজেপি। দেওয়ানগঞ্জ মোড়ে পথসভা হয়েছে। কাটোয়া শহর লাগোয়া পানুহাটেও সভা করে তারা। বিজেপির কাটোয়া সাংগনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সময় যত গড়াচ্ছে, ততই তৃণমূলের দুর্নীতি সামনে আসছে। দলের বুথ স্তরের কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলছেন। পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।”
‘নিয়োগ-দুর্নীতি’ সামনে আসার পরে, কাটোয়া জুড়ে পথে নেমেছে বামেরাও। গত কয়েক মাসে ছোট-বড় অনেক মিছিল করেছে তারা। আগামী দিনগুলিতে ‘আন্দোলনের তীব্রতা’ আরও বাড়বে দাবি করে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রকাশ সরকারের মন্তব্য, ‘‘শুধু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে পথে নেমেছি, এমনটা নয়। তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরের ছদ্ম-বিরোধী। দুই দলের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। বিজেপি দেশের সম্পদ লুট করে। তৃণমূল রাজ্যের। আমরাই তৃণমল-বিজেপির প্রকৃত বিরোধী। এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তাই কাটোয়ায় আমাদের সব মিছিলে ভিড় বাড়ছে।’’ কংগ্রেসের কাটোয়া মহকুমা সভাপতি জগদীশ দত্ত বলেন, ‘‘তৃণমূল যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তা প্রথম থেকেই বলছি। কাটোয়ায় সাংগঠনিক সামর্থ্য অনুযায়ী, লড়াই-আন্দোলন করছি।’’
বিরোধীদের ‘সক্রিয়তাকে’ অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ পুর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে বিজেপি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে। হাজার-হাজার কোটি টাকা লুট করছে। বাংলার মানুষ বিজেপিকে বিশ্বাস করে না। তাই ওদের গুরুত্ব দিচ্ছি না।” সিপিএম-কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওরা বঙ্গ রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।’’