শুনানির শেষ পর্যায়ে ফের তদন্তের নির্দেশ

দশ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ছেলেটি। পরে আদালতের নির্দেশে অপহরণ ও খুন করে দেহ লোপাটের মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শুরুও হয়। ২০০৯ সালে চার্জশিটও জমা পড়ে। এত দিন শুনানি চলার পরে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে পুরো বিষয়টি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আইনজীবীরা জানান, ছেলেটি জীবিত না মৃত, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি চার্জশিটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০১:৪৮
Share:

দশ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ছেলেটি। পরে আদালতের নির্দেশে অপহরণ ও খুন করে দেহ লোপাটের মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শুরুও হয়। ২০০৯ সালে চার্জশিটও জমা পড়ে। এত দিন শুনানি চলার পরে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে পুরো বিষয়টি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

আইনজীবীরা জানান, ছেলেটি জীবিত না মৃত, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি চার্জশিটে। তদন্তকারী অফিসার দায়সারা ভাবে তদন্ত করেছেন বলেও আদালত জানিয়েছে। এরপরেই কাটোয়ার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (২) সঞ্জয় দাস কেতুগ্রামের আইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন কাটোয়া এসিজেএম-এর তত্ত্বাবধানে পুরো বিষয়টির ফের তদন্ত করার। কী কী ভাবে তদন্ত করতে হবে তার নির্দেশিকাও করে দিয়েছেন বিচারক।

পুলিশ জানায়, ১০ বছর আগে বর্ষার সময়ে কেতুগ্রামের বছর সতেরোর রাজীব চৌধুরী আরও দু’জনের সঙ্গে বিহারে কাজ করতে যান। পরে অন্য দু’জন বাড়ি ফিরে এলেও রাজীব কেতুগ্রামে ফেরেননি। রাজীবের মা নূর নেহার বিবির অভিযোগ, এই তিন জনকে কাজে নিয়ে গিয়েছিলেন মানোয়ার শেখ ও আরমান শেখ নামে দুই ব্যক্তি। বছর দুয়েক পরে, ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই আদালতের দ্বারস্থও হন তিনি। নূর নেহার বিবির অভিযোগ, ছেলে ফিরে না আসায় তিনি মানোয়ার শেখ ও আরমান শেখের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ছেলের খোঁজ দেওয়া তো দূরের কথা বারবার হেনস্থা করেছেন। এরপর তাঁরা নিজেরাই খোঁজখবর করে জানতে পারেন, ছেলে বিহারে নেই। কিন্ত এ কথা পাঁচ কান করা হলে অভিযুক্তরা তাঁদের প্রাণে মারার হুমকিও দেন। মামলার সরকারি আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করে কেতুগ্রাম থানাকে নির্দিষ্ট ভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। কেতুগ্রাম থানা ভিক্ষা করানোর উদ্দেশে নাবালককে অপহরণ এবং খুন করে দেহ লোপাট করার ধারা দিয়ে মামলার তদন্ত শুরু করে। মামলার প্রথম তদন্তকারী অফিসার, ফণিভূষণ সরকার কেস ডায়েরিতে আদালতকে জানিয়েছিলেন, রাজীবের সঙ্গে সাহেব চৌধুরী ও রিপন শেখ নামে আরও দু’জন কাজের উদ্দেশে বিহারে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, রাজীব বিহার থেকে কাজের খোঁজে লখনউ য়ান। তবে বারবার খওঁজ করার পরেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায়নি। ফণিভূষণবাবু কেতুগ্রাম থানা থেকে বদলি হয়ে গেলে মামলায় তদন্তের দায়িত্ব নেন বিভাস মণ্ডল। ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট পেশ করেন তিনি। মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দেবেন বলেও চার্জশিটে জানান তদন্তকারী অফিসার।

Advertisement

আইনজীবীরা জানান, গত শুক্রবার আদালতে সঞ্জয়বাবুর এজলাসে সাক্ষ্য দিতে আসেন অভিযোগকারিণী নূর নেহার বিবি। তিনি বিচারককে জানান, ‘১০ বছর কেটে গেলেও আমার ছেলে জীবিত না মৃত, জানতে পারলাম না।’ সরকারি আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এরপরেই আদালতে নজরে আনেন যে পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছে রাজীব বর্তমানে হরিয়ানার একটি কেক প্রস্তুতকারক কারখানায় কাজ করেন। অথচ পুলিশ কী ভাবে ওই তথ্য পেল, হরিয়ানায় গিয়ে কারখানার মালিক বা ম্যানেজারের কাছে কোনও কিছু জিজ্ঞাসা না করেই কীভাবে চার্জশিট জমা দেওয়া হল, এমনকী রাজীবের একটা ছবি জোগাড় করারও প্রয়োজন মনে করেনি পুলিশ। এরপরেই বিচারক চার্জশিট নতুন করে খতিয়ে দেখেন। পরে বিচারক তার রায়ে জানান, এক নাবালক অপহরণের ঘটনায় পুলিশ নাবালিকা অপহরণের চার্জগঠন করেছে! গভীর ভাবে ঘটনার তদন্ত না করে দায়সারা ভাবে তদন্ত করে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে আদালতে। নিখোঁজ ছেলেটি জীবিত না মৃত সে ব্যাপারেও পুলিশ চার্জশিটে কিছু জানায়নি। অর্থাৎ তদন্তকারী অফিসাররা সততার সঙ্গে ছেলেটিকে খোঁজার ব্যাপারে কোনও রকম তদন্তই করেননি।

এ ছাড়া বিচারক কেতুগ্রামের আইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন, হরিয়ানার ওই কেক প্রস্তুতকারক সংস্থায় গিয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। পুরো তদন্তই কাটোয়ার এসিজেএম-এর তত্ত্বাবধানে হবে। পুলিশকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এসিজেএমের কাছে রিপোর্ট দিতে হবে। সরকারি আইনজীবী বলেন, “প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য বিচারক সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ করে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের জন্য সমস্তরকম সাহায্য করার জন্য পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা করার জন্যও বলেছে বিচারক।”

জেলা পুলিশের কর্তাদের মুখে স্বভাবতই কুলুপ। তাঁরা জানিয়েছেন, রায়ের প্রতিলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement