ঘাগরবুড়ি মন্দির চত্বর। নিজস্ব চিত্র
অন্য বছর এই সময়ে সাজ-সাজ রব থাকে। ম্যারাপ বাঁধা, বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি, ফুল-মালা আর আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে কল্যাণেশ্বরী ও ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে। কিন্তু এ বার করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে সে সবের ছিটেফোঁটাও নেই। সেবাইতেরা জানান, কোনও রকমে পুজো সেরেই গেটে তালা দেওয়া হচ্ছে রোজ।
মন্দির দু’টির সেবাইতেরা জানান, বাংলা নববর্ষের দিন মন্দির চত্বরে তিল ধারনের জায়গা থাকে না। সূর্যোদয়ের অনেক আগে থেকেই পুজো দিতে আসানসোল-সহ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজার-হাজার ভক্তের লাইন পড়ে। হালখাতা পুজো করাতে আসেন ব্যবসায়ীরাও। রোদ থেকে ভক্তদের বাঁচাতে মন্দির চত্বরে ম্যারাপ বাঁধা হয়। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রশাসনের তরফে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়।
এ বার সে সব প্রস্তুতির দরকারই পড়ছে না বলে জানান ঘাঘরবুড়ি মন্দিরের সেবাইত সুদীপ্ত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘এ বার যদি জটলা হয়ও, তা এড়াতে মন্দিরের গেট খোলা হবে না। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে মন্দির চত্বরে প্রচুর বিয়ের আসর বসে। এ বার এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭টি বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। বাতিল হয়েছে একাধিক উপনয়নও।’’
একই ছবি পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় থাকা কল্যাণেশ্বরী মন্দিরেও। প্রায় পাঁচ শতাব্দীর পুরনো এই মন্দিরের অন্যতম সেবাইত মিঠু মুখোপাধ্যায় জানান, বাংলা নববর্ষের দিনে কম-পক্ষে সাত হাজার মানুষ আসেন। এ বার সে সবের সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, বাংলার প্রথম দু’মাসে প্রতিটি বিয়ের তারিখে অন্তত ১৫টি বিয়ে হয়। হয় উপনয়নও। কিন্তু এ বার সব বাতিল হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে দুই মন্দিরের সামনে থাকা পুজোর উপচারের দোকানদারেরা। কল্যাণেশ্বরীর শঙ্করী প্রসাদ বলেন, ‘‘নববর্ষে প্রথম দিন ভাল আয় হয়। তা ছাড়া, বছরভর ভাল বিক্রি হয়। এ দিয়েই সংসার চলে। কিন্তু করোনার জেরে ভক্তেরা আসছেন না। ফলে, আয় একেবারেই বন্ধ।’’
বছরের প্রথম দিনে ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে গিয়ে হালখাতা পুজো করানোটা পারিবারিক রীতি বলে জানালেন বার্নপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রদীপ কয়াল। তিনি বলেন, ‘‘এ বারই প্রথম মন্দিরে যেতে পারব না। দোকানে কোনও রকমে পুজো হবে।’’