প্রতীকী ছবি।
‘লকডাউন’-এ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ। খুদে পড়ুয়াদের অনলাইনে পাঠদানের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। জানানো হয়েছে, অঙ্গনওয়াড়ির সহায়িকারা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের মাধ্যমে স্কুলের প্রতিদিনের বিষয়গুলি অভিভাবকদের বুঝিয়ে দেবেন। তাঁরা বাড়িতে সন্তানদের শেখাবেন সে সব। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যে পরিবারে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই সেখানে পুরো প্রক্রিয়াটাই থমকে যাচ্ছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশির ভাগের ওই ফোন নেই। থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারেন না তাঁরা। সে ক্ষেত্রে সন্তানদের শিক্ষার ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব। অঙ্গনওয়াড়ির পড়ুয়াদের যাতে শিক্ষার কোনও ঘাটতি না হয়, তা দেখব।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ মে ‘ডিরেক্টর অফ আইসিডিএস’-এ দফতর থেকে জেলাশাসকদের কাছে ওই নির্দেশিকা এসেছে। সেখান থেকে জানানো হয়েছে ‘চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার’ (সিডিপিও)-দের।
কাটোয়া মহকুমা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার দুটি ব্লক মিলে ৪৮০টি অঙ্গনওয়াড়ি রয়েছে। তিন থেকে ছ’বছরের ছেলেমেয়েরা সেখানে যায়। গরমে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা ও শীতকালে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্র চলে। অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষিকা ও সহায়িকারা মিলে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দেন। তাঁরা জানান, কেন্দ্রে আসার পরে পড়ুয়াদের প্রার্থনা করিয়ে ছাতু, কলা বা কেক জাতীয় খাবার দেওয়া হয়। তার পরে চলে নখ, চুল ও দাঁত পরীক্ষা। পোশাক পরিচ্ছন্ন কি না দেখা হয় তাও। ব্যায়াম, খেলাধূলা, কথোপকথন, ছড়া, আঁকা ও গল্পের ছলে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পরে ভাত বা খিচুরির সঙ্গে তরকারি ও ডিম খেতে দেওয়া হয়।
কাবেরি মোদক নামে এক অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষিকার কথায়, ‘‘প্রতিদিন আমাদের পাঁচ থেকে সাত রকমের ক্লাস নিতে হয়। এখন অনলাইনে শিক্ষা দেওয়া হবে বলে জেনেছি। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হবে। কারন, গরিব অভিভাবকদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। অনেক অঙ্গনওয়ারি শিক্ষিকারও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নেই বা থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে শিক্ষা দেওয়া মুশকিল।’’
কাটোয়া বিকিহাট গ্রামের মালতী সরকার নামে এক অভিভাবিকার কথায়, ‘‘আমরা গরিব মানুষ বলেই তো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছেলেমেয়েদের পাঠাই। মাস সাতেক আগে বারশো টাকা দিয়ে একটি ছোট মোবাইল কিনেছিলাম। পয়সা ভরতে পারিনি বলে তাও কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে। বড় ফোন আমরা পাব কোথায়।’’
কাটোয়া ১ ব্লকের সিডিপিও তপন ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার অনলাইনে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, শীঘ্রই তা চালু করা হবে। তবে অনেক মায়েদের মোবাইল নেই। এটা একটা সমস্যা। আমাদের কর্মীরা যতটা পারবেন অভিভাবকদের শিখিয়ে দেবেন, যাতে বাড়িতেই তাঁরা শেখাতে পারেন।’’