টোটোয় যাত্রা। কুলটির নিয়ামতপুরের রাস্তায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কিছুটা শিথিল করা হয়েছে ‘লকডাউন’। বিধিনিষেধ মেনে খুলেছে নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। কম সংখ্যক শ্রমিক-কর্মী নিয়ে উৎপাদন শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে। কিন্তু গণ পরিবহণ এখনও সে ভাবে চালু হয়নি। ফলে, কার্মস্থলে যাতায়াত করতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেক শ্রমিক-কর্মীরই। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে গণ পরিবহণ চালু হয়, সে বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক জেলা প্রশাসন। তবে ইতিমধ্যে আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কম যাত্রী নিয়ে পুরোনো ভাড়াতেই অটো ও টোটো চলতে দেখা গিয়েছে। সেগুলির চালকদের দাবি, নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনেই তা চালানো হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বাসের ভাড়া বাড়ানো চলবে না। কম যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়াতেই বাস চালু করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার বাস মালিকদেরও এই নির্দেশ কার্যকর করার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু মালিকেরা তাতে রাজি হননি। ফলে, আপাতত বাস পরিষেবা চালুর পরিস্থিতি নেই। কিন্তু ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প সংস্থা থেকে নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ায় কর্মীরা কাজে যোগ দিচ্ছেন। প্রায় দু’মাস পরে, কাজে যোগ দিতে পেরে তাঁরা খুশি। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
তবে মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে তুলনায় কম যাত্রী নিয়ে অটো-টোটো চলতে দেখা যাচ্ছে। নিয়ামতপুর অঞ্চলের এক টোটো চালক মহম্মদ খুরশিদ বলেন, ‘‘যাত্রীদের যেমন পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে, আমাদেরও উপার্জনের দরকার। টোটোর ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। প্রায় ৫০ দিন কোনও আয় হয়নি।’’ তাঁর দাবি, আগে যেখানে ১০ টাকা ভাড়া নেওয়া হত, এখন তা ১৩ টাকা নেওয়া হচ্ছে। চার জনের পরিবর্তে যাত্রী নিচ্ছেন তিন জন। তিন টাকা বেশি ভাড়া গুণতে হলেও তাঁরা এই ব্যবস্থায় রাজি, জানান দেন্দুয়ার এক কারখানার শ্রমিক প্রেমবিহারী প্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘তবে টোটো চালু হওয়ায় কাজে যেতে পারছি, মজুরি পাচ্ছি। এটাই বড় কথা।’’
একই দাবি অটো চালকদেরও। আসানসোলের হাটন রোড এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা অটো চালক বনোয়ারি ভগতের কথায়, ‘‘আগে অটোয় চার জন যাত্রী নিতাম, ভাড়া মাথা পিছু সাত টাকা। জেলা হাসপাতাল, আসানসোল বাজার, ইসমাইল-সহ আশপাশের যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি। এখন তিন জন যাত্রী নিচ্ছি, ভাড়া মাথা পিছু ১০ টাকা।’’ জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক যাত্রী বলেন, ‘‘বাস চলছে না। কিছু বেশি টাকা নিয়েও অটো চলছে বলে সুরাহা হয়েছে।’’
বাস না চলা সত্ত্বেও টোটো-অটোয় সাধারণ মানুষের হয়রানি কিছুটা লাঘব হওয়ায় খানিক স্বস্তিতে জেলা প্রশাসনের কর্তারা। বাস কবে চলবে, সে প্রশ্নে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাস চালু করার চেষ্টা হবে।’’ আসানসোলের বাস মালিক সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ বিজন মুখোপাধ্যায় অবশ্য সোমবারও দাবি করেন, কম যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়ায় বাস চালানোর ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়।