বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের দু’টি ওয়ার্ড ঘুরে এ ভাবেই শিশুদের জন্য খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিলেন তপন বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত মার্চের বেতন পাননি তিনি। কবে পাবেন বা পেলেও পুরো বেতন মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানান দুর্গাপুরের অর্জুনপুরের বাসিন্দা, বছর ৪৫-এর তপন বাউড়ি। কিন্তু গত দু’-তিন দিন ধরে তপনবাবু তাঁর সাইকেলকে সঙ্গী করে চষে বেড়াচ্ছেন নানা এলাকা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য তাঁর সঙ্গের ঝোলায় থাকছে দুধ, কলা, বিস্কুট। তপনবাবু জানান, এ সবই করছেন সঞ্চিত অর্থ দিয়ে। পাশাপাশি, করোনা-সতর্কতার প্রচারও করছেন।
বৃহস্পতিবার তপনবাবুকে দুর্গাপুর পুরসভার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেল। সাইকেলের সামনে দুঃস্থদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে হাতে লেখা পোস্টার। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামীণ এলাকা পুরষা, সুকান্তপল্লি, জিতেননগর, অর্জুনপুর প্রভৃতি জায়গায় তিনি এ দিন ঘুরেছেন। সঙ্গে ছিল দুধ, কলা, বিস্কুট। এই এলাকা থেকে তিনি চলে যান ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অঙ্গদপুর। সর্বত্রই শিশুদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন তিনি।
অকৃতদার তপনবাবু পেশায় একটি বেসরকারি কারখানার ঠিকাকর্মী। এলাকাবাসী জানান, সামাজিক কাজে এর আগেও বারবার অগ্রণী ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিভিন্ন সময়ে তিনি দুঃস্থদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। আবার ডাইনি অপবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচার তিন জনকে নিয়ে গড়েছেন দল। আয়োজন করে চলেছেন পথনাটিকাও।
বেসরকারি কারখানার ঠিকাকর্মী। তপনবাবু ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে কেমন আছেন? জবাব মেলে, ‘‘কারখানার ঠিকাকর্মীদের বেতন হয়নি এখনও। শিশুরা কষ্টে আছে। তাই আমি বেরিয়েছি শিশুদের খাবার দিতে। আমার নিজের সঞ্চিত অর্থ যা আছে তা দিয়েই যতক্ষণ পারব, এটা করে যাব। নিজে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক রয়েছি। অন্যকেও সতর্ক করার চেষ্টা করছি।’’
তপনবাবুর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। অর্জুনপুরের বাসিন্দা সুধাময়ী দাস বলেন, ‘‘রোজগার বন্ধ। নাতিটা দুধ, কলা, বিস্কুট পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। তপনবাবুকে ধন্যবাদ।’’ দুর্গাপুর পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে যে, যেমন ভাবে পারছেন দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তপনবাবু তাঁদেরই এক জন। ওঁর উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’