উপরে, ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’। নীচে, ‘টিম অভিষেক’-এর সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র।
ভোট-মরসুমে নিজ-নিজ দলের পতাকা হাতে ওঁদের দেখা গিয়েছে। কিন্তু এখন সে সব সরিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মূলত ছাত্র-যুবরা বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করে এগিয়ে আসছেন কোভিড-মোকাবিলায়। এই তালিকায় রয়েছে, ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’, ‘টিম অভিষেক’, ‘এগিয়ে বাংলা’, ‘সঙ্কল্প’-এর মতো বিভিন্ন সংগঠন। ওষুধ, খাবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো রোগীকে, এমন নানা কাজ করছে সংগঠনগুলি।
বাম প্রভাবিত সংগঠন ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-রা গোটা রাজ্যের মতো জেলা জুড়েই কাজ করছে। নিজেরা ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে এলাকা ধরে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এলাকাভিত্তিক যোগাযোগের নম্বরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অক্সিজেন, ওষুধ থেকে খাবার, সাধ্যমতো সে সব নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন রেড ভলান্টিয়ার্সেরা। সম্প্রতি রূপনারায়ণপুরের দুর্গা মন্দিরের বাসিন্দা শুভদীপ সেন করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘কী করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। খবর দিতেই ছুটে এলেন রেড ভলান্টিয়ার্সেরা। তাঁরাই বাবাকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’’ এই সংগঠনে রয়েছেন মূলত ডিওয়াইএফ ও এসএফআই-এর ছাত্র-যুবরা। ডিওয়াইএফ-এর রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্য জুড়েই আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই ২৪ ঘণ্টা সংগঠনের সদস্যেরা পৌঁছে যাচ্ছেন আক্রান্তের বাড়িতে।’’
একই ভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন মূলত যুব তৃণমূলের সদস্যদের নিয়ে তৈরি ‘টিম অভিষেক’। জেলায় প্রায় শতাধিক কর্মী, সদস্য রয়েছেন এই ‘টিম’-এ। যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো বিভিন্ন কাজ করছেন তাঁরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সম্প্রতি কুলটির চলবলপুরের বাসিন্দা এক নিঃসঙ্গ অচেতন বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিল এই সংগঠনটি। কয়েকদিন পরে বৃদ্ধার দেহ সৎকারেও এগিয়ে আসেন সংগঠনের সদস্যেরা। ‘এগিয়ে বাংলা’ নামে যুব তৃণমূলের একটি পৃথক সংগঠনও অনুরূপ কাজ করছে। তবে তাঁদের কাজকর্ম মূলত কুলটিতে।
গেরুয়া শিবিরের ছাত্র-যুবরা মূলত আক্রান্তের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন বলে জানা গেল। ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ‘সঙ্কল্প’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে ৭৫০টি খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কোভিড-আক্রান্তদের দরজায়।
ছাত্র-যুবদের এই সমস্ত কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শহরবাসীও। চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত, অমরেশ মাজিদের অভিজ্ঞতা, ‘‘চিকিৎসকেরা সংক্রমিতদের পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সুস্থ করাচ্ছেন ওই যুবক-যুবতীরা। এটা কম কথা নয়।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য, অনিতা ভট্টাচার্যদের আবার প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলে আমরা নিত্য মনুষ্যত্ব তৈরির পাঠ দিই। আজকে আমাদেরই ছাত্রছাত্রীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, এই পাঠে ওঁরা কতটা সফল।’’
তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, উপযুক্ত সুরক্ষা-বিধি মেনে যেন কাজ করেন এই ছাত্র-যুবরা। মীনাক্ষী, বিশ্বজিৎ, বাপ্পারা অবশ্য় জানান, তাঁরা ‘মাস্ক’, স্যানিটাইজার নিয়ে এবং দূরত্ব-বিধি মেনেই এই কাজ করছেন। এ পর্যন্ত এই কাজ করতে গিয়ে জেলায় এক জনও কোভিড আক্রান্ত হননি বলেই দাবি ছাত্র-যুবদের।