প্রতীকী ছবি।
‘করোনাকে ভয় নয়, জয়’—এই বার্তাই দিতে চাইছে পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। করোনা উপসর্গ না লুকনোর জন্য প্রচার চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হয়নি। আগামী দিনেও সমস্ত আক্রান্তই যাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন, সেটাই জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য। সেই কারণে জেলায় ‘কোভিড’ ও ‘প্রি-কোভিড’ হাসপাতাল গড়ার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।
শুক্রবার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “আমাদের জেলায় আক্রান্তের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়ও বলেন, “করোনা নিয়ে অহেতুক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ‘উপসর্গ লুকিয়ে বাড়িতে বসে থাকবেন না বা রাস্তায় ঘুরে বেড়াবেন না’ বলেও প্রচার চালানো হচ্ছে। চিকিৎসকেরা হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় আক্রান্তের শংসাপত্রে সুস্থ বলে লিখেও দিচ্ছেন।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জেলায় ১২৪ জন করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে কাঁকসার ‘কোভিড-১৯’ হাসপাতালে ২৩ জন ভর্তি রয়েছেন। বাকি ১০১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। চলতি সপ্তাহে প্রতি দিনই পাঁচ-সাত জন করে করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি, দাবি করছেন কর্তারা। সিএমওএইচ বলেন, “হাতে গোনা কয়েকজনকে বাদ দিলে সবাই পরিযায়ী। গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে কি না দেখার জন্যে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ক্রমাগত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অনুমান, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার হার বেশি থাকায় আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছিল। নমুনা ও পরীক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য আনার জন্য জেলা ধীরে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক স্বাস্থ্য-কর্তার কথায়, “করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। কিন্তু এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। মৃত্যুহার শূন্য রাখাটাই আমাদের পরীক্ষা।’’ সে কারণে প্রতিদিন কাঁকসার বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মৃত্যু ঠেকাতে কী ধরণের বিধি মেনে চিকিৎসা চলছে, তা বিশ্লেষণ করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তার কথায়, “ক্রমাগত আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর মতে, অনেকেই উপসর্গ গোপন করছেন। সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। সে ক্ষেত্রে সংক্রমিত হলেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা যায়, সে উদাহরণ তুলে ধরে প্রচার চালাতে হবে। শুরুতেই আক্রান্তদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়াও সহজ করা প্রয়োজন।
সিএমওএইচের দাবি, “শুরুতেই আক্রান্তদের চিহ্নিত করা, দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর কাজ করা গিয়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই। চিকিৎসা পরিষেবা আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে বর্ধমানের গাংপুরের প্রি-কোভিড হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। কালনায় ১০০ শয্যার প্রি-কোভিড হাসপাতাল তৈরির নির্দেশও এসেছে।’’