coronavirus

আসেননি আত্মীয়েরা, শ্মশানে গেলেন ফারুকেরা

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের কয়েকবছর পরে হাত-পা অসাড় হয়ে যায় অশোকের। গত কয়েকদিন ধরে সে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৬:৪০
Share:

কিশোরের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করলেন চার যুবক। নিজস্ব চিত্র।

আত্মীয়স্বজনেরা সাড়া দেননি। পড়শিদের একাংশও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা প্রতিবন্ধী কিশোরকে কী ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা ঠাকুমা। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন এলাকার চার যুবক। অশোক বাদলি (১৬) নামে ওই কিশোরকে ভ্যানে করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, সেখানে মৃত ঘোষণার পরে, দেহ বাড়ি ফিরিয়ে আনা, শেষে সৎকারের জন্য শ্মশানে পৌঁছে দেওয়া— সবই করলেন ফারুক আবদুল্লা, ইরফান আলি মল্লিক, শেখ আজিজুল ও শেখ টোটোন।

Advertisement

ওই কিশোরের বাড়ি মেমারি শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে খাঁড়োয়। চার যুবকের বাড়ি কাছাকাছি এলাকাতেই। আবদুল্লার আফসোস, ‘‘বাড়ির লোকের কাছে একটু আগে খবর পেলে অশোককে ঠিক সময়ে হাসপতালে নিয়ে যেতে পারতাম। ও বেঁচেও যেতে পারত। খুব খারাপ লাগছে।’’ আর্থিক ভাবে ওই পরিবারের পাশে থাকার কথা ভেবেছেন, জানান তাঁরা। ফারুকের কথায়, ‘‘এই বিপদের দিনে এক অসহায় পরিবারের পাশে আমরা না দাঁড়ালে, আর কে দাঁড়াবেল আতঙ্কিত না হয়ে, কোভিড-বিধি মেনে আমরা কর্তব্য পালন করেছি।’’ সৎকার থেকে শ্রাদ্ধের খরচ তাঁরাই দেবেন বলে পরিবারটিকে জানিয়েছেন ফারুক, ইরফানেরা।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অশোকের জন্মের সময়েই তার মায়ের মৃত্যু হয়। বাবা সুকুমার বাদলি অন্যত্র সংসার পেতেছেন। ঠাকুমা সোমবুড়ি বাদলি ও কাকা ভাদুড়ি বাদলির কাছে সে থাকত। পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের কয়েকবছর পরে হাত-পা অসাড় হয়ে যায় অশোকের। গত কয়েকদিন ধরে সে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাচ্ছিল। বুধবার ভোরে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার ঠাকুমা বলেন, ‘‘আত্মীয়স্বজনকে ফোন করা হয়। কেউ এগিয়ে আসেননি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন ওই চার যুবক আমাদের পাশে দাঁড়ান।’’ ইরফানেরা জানান, একটি ভ্যানে করে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান অশোককে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, রাস্তাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এও সে কথাই লেখা রয়েছে।

Advertisement

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, দু’দিন ধরে অশোক জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিল। তাই আত্মীয়স্বজনের অনেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করেছেন। একই আশঙ্কা করে পড়শিরাও এগিয়ে যেতে সাহস পাননি। তবে খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন অশোকের বাবা সুকুমারবাবু। পেশায় দিনমজুর সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘আমি এসে দেখলাম, ছেলে শ্মশানে। ফারুক, ইরফানেরাই সব কিছু করছিল। নিজেদের লোকজন ফোনও তোলেনি।’’ ছেলেটির কাকিমা রেবাদেবী বলেন, ‘‘আমরা চিৎকার করে সবাইকে ডেকেছিলাম। কেউ আসেননি। ওঁরা চার জন না এলে কী করতাম, জানি না!’’

পেশায় শিক্ষক, ‘বর্ধমান জেলা জাহের’ সংগঠনের সভাপতি জগন্নাথ টুডু বলেন, ‘‘আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ এগিয়ে এলেন না কেন, এটা চিন্তার। অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ওই যুবকেরা সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন।’’ পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘‘এই বাতাবরণ সব সময় বজায় থাকবে, এটাই কাম্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement