বর্ধমানে বাড়ি-বাড়ি খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
করোনা নিয়ে নিবিড় সংযোগে গ্রামে বাড়ি-বাড়ি সফল হচ্ছেন আশাকর্মীরা। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের বেশিরভাগ পুরসভা এলাকায় সে কাজে ‘ঘাটতি’ দেখা যাচ্ছে, দাবি জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের। বর্ধমানের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের কর্তাদেরও অনেকের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকর্মীরা এখনও সব জায়গায় বাড়ি-বাড়ি পৌঁছতে পারেননি। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠনের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না করেই তাঁদের কাজে নামানো হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বর্ধমান, মেমারি ও দাঁইহাট শহরে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা (এএইচডব্লু) বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে রিপোর্ট মিলেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘পুরসভাগুলিকে নজর দিতে বলা হয়েছিল। আগের চেয়ে কিছুটা ভাল কাজ হচ্ছে।’’
৮ এপ্রিল জেলা পর্যায়ের এক বৈঠকে ঠিক হয়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গ্রামে যেমন আশাকর্মীরা এলাকায় ঘুরছেন, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরাও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খবর নেবেন, কোনও বাসিন্দার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কি না। সেই রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হবে। তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, আশাকর্মীরা ওই কাজ নিবিড় ভাবে করায় বাইরে থাকা আসা অনেককে ‘কোয়রান্টিন’-এ পাঠানো গিয়েছে। কিন্তু পুর-এলাকাগুলিতে পর্যবেক্ষণ ঠিক ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান পুরসভার সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সেখানে বলা হয়েছিল, প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়ে প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে হবে। বর্ধমান পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর সুশান্ত প্রামাণিক, পরেশ সরকারেরা দাবি করেন, ‘‘আমাদের এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি এসে খোঁজ নিচ্ছেন, এমন খবর পাইনি।’’ তবে আর এক বিদায়ী কাউন্সিলর সাহাবুদ্দিন শেখ জানান, তাঁর এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন। মেমারির সিপিএএম নেতা সনৎ সিংহের অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি যেতে দেখছি না।’’ একই অভিযোগ দাঁইহাট পুরসভার বাসিন্দাদের অনেকের।
বর্ধমান পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতর ঘাটতির কথা আমাদের জানিয়েছিল। তার পরে বৈঠক করেছি। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে রিপোর্টও করছেন।’’ দাঁইহাট ও মেমারি পুরসভা কর্তৃপক্ষেরও দাবি, গোড়া কিছু সমস্যা হচ্ছিল। এখন এলাকা ঘুরে রিপোর্ট দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
‘পশ্চিমবঙ্গ পুর স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন’-এর রাজ্য সভানেত্রী সুচেতা কুণ্ডুর অভিযোগ, ‘‘সুরক্ষা থেকে আর্থিক নিরাপত্তা, কোনওটাই না দিয়ে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যেকের জন্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে চিঠি পাঠিয়েছি।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, বৃহস্পতিবার থেকে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় ‘মাস্ক’ এবং ‘পিপিই’ পাঠানো হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, মাত্র ১৫ শতাংশ কর্মীর কাছে সেই ‘পিপিই’ পৌঁছবে।