প্রতীকী ছবি।
জেলায় করোনা সংক্রমণের রেখাচিত্র কিছুটা নীচের দিকে, অন্তত গত দু’সপ্তাহের প্রশাসনিক রিপোর্ট সেই কথা বলছে। তবে পরিসংখ্যান স্বস্তি দিলেও সচেতনতায় ঢিলে দেওয়ার জায়গা নেই, জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা। স্বাস্থ্য দফতরের একটা অংশ আবার মনে করছেন, ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি শুরু হলে সংক্রমণের চিত্র এ রকম দেখাতেই পারে। তবে এখনই নিশ্চিত ভাবে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন না তাঁরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “সংক্রমণ কমছে এটা ঠিকই, তবে এখনই উৎফুল্ল হওয়ার জায়গা নেই। কমার হারটা ধারাবাহিক কি না, দেখার পরে পর্যালোচনা করব।’’ এ দিকে, বিলেত ফেরত যাত্রী খোঁজার কাজও সোমবার থেকে ফের শুরু করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।
করোনার নতুন ‘স্ট্রেন’ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। সে পরিস্থিতিতে জেলায় গত দু’সপ্তাহে সংক্রমণের হার দৈনিক ৫০-এর নীচে। তবে শীতের মরসুমে পিকনিক, ঘুরতে যাওয়া, বছর শেষের হুল্লোড়ে সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্য-বিধি নিয়ে শিথিলতা না দেখান, সে দিকে জোর দেওয়ার কথা বলছেন কর্তারা। সংক্রমণের পরবর্তী ধাপ নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। জেলাশাসক মহম্মদ এনাউর রহমান বলেন, “স্বাস্থ্য-বিধি মানার কথা প্রশাসনের তরফে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হচ্ছে। আমরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য-বিধি মানার কথা বলছি। মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। তবে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই।’’
প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় ১০ ডিসেম্বর ১০১ জন আক্রান্ত হন। তার পর থেকে অবশ্য সংক্রমণের রেখাচিত্র নিম্নগামী। গত দু’সপ্তাহে মাত্র পাঁচ দিন করোনা সংক্রমণ জেলায় ৫০ পেরিয়েছে। অথচ, কিছু দিন আগেও এই জেলায় গড় দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল ৯০-এর কাছাকাছি। গত মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দৈনিক করোনা সংক্রমণ হয়েছে যথাক্রমে ৩৯, ১৪, ৪০ ও ২৪ জন। জেলায় ‘অ্যাক্টিভ’ করোনা আক্রান্ত ৩৪৮ জন। কোভিড হাসপাতালে এই মুহূর্তে কেউ ভর্তি নেই। সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫.৫ শতাংশে। মৃত্যুর হার রয়েছে দেড় শতাংশের কাছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, জেলায় কোনও ‘সেফ হাউস’, বা নিভৃতবাস কেন্দ্র বন্ধ হয়নি। পরীক্ষাও বাড়ানো হয়েছে। আরটি-পিসিআর যন্ত্রে পরীক্ষা হচ্ছে, দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। ‘‘তার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা কম হচ্ছে দেখে, আমরা অবাক হচ্ছি’’, বলছেন ওই দফতরের এক কর্তা।
বিদেশ ফেরত যে কোনও নাগরিকের করোনা-পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। বৃহস্পতিবারই সে নির্দেশ জেলায় পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, আগে গৃহ-নিভৃতবাসে রাখার পরে, উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা হত। এখন থেকে সমস্ত বিদেশ ফেরতেরই আরটি-পিসিআর যন্ত্রে করোনা-পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ‘ব্রিটেন-স্ট্রেন’ এর ভয়ে স্বাস্থ্য ভবন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ এলেও ছুটি মিলবে না, বিলেত ফেরত যাত্রীকে এক সপ্তাহ কড়া নজরদারির মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “প্রত্যেকটি ব্লক ও পুরসভাকে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ জানানো হবে। প্রথম দিকের মতো বিলেত ফেরত যাত্রীর খোঁজে ফের তল্লাশি শুরু হবে।’’