টিকার জন্য এমনই লাইন পড়েছিল দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।
টিকাকরণ কর্মসূচি কী ভাবে হবে, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে চিত্তরঞ্জন ও দুর্গাপুরের দু’জায়গায় অসন্তোষ দেখা গেল। শুক্রবার যথাক্রমে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লিউ) কস্তুরবা গাঁধী হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সগড়ভাঙার ৫ নম্বর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা।
কস্তুরবা গাঁধী হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএলডব্লিউ-র কর্মী এবং রেল কলোনির আবাসিকদের কী ভাবে কোভিড টিকা দেওয়া হবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার আইএনটিইউসি-র সঙ্গে বৈঠক করা হয়। শুক্রবার ওই একই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছিল কারখানার লেবার ইউনিয়ন। ইউনিয়নের সম্পাদক রাজীব গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘বৈঠকের মাঝে আচমকা আইএনটিইউসি-র কয়েকজন সদস্য-সমর্থক ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আমরা তার বিরোধিতা করি।’’ এর পরেই দু’টি সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে বচসাও বাধে বলে অভিযোগ। যদিও আইএনটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি নেপাল চক্রবর্তীর তোপ, ‘‘আমাদের সঙ্গে বৈঠকে টিকাকরণ সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লেবার ইউনিয়ন ভেস্তে দিতে চেয়েছিল। আমরা এর বিরোধিতা করেছি। কোনও বচসা হয়নি।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউনিয়ন।
এ দিকে, বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ও দুর্গাপুর পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুক্রবার টিকা নিতে সগড়ভাঙার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লাইন দেন এলাকাবাসীর একাংশ। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়ে ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের সই করা কাগজ এনে বাইরে থেকে আসা লোকজন টিকা নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করে লাইনে দাঁড়ানো বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভিতরে আটকে থাকেন টিকা দিতে আসা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশকর্মীদের ঘিরেও ক্ষোভপ্রকাশ করেন বাসিন্দারা।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে তাপস পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আচমকা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজনের নাম ডাকা শুরু হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তাঁদের পাঠিয়েছেন কাউন্সিলর।’’ পিয়ালী শীল নামে এক জন বলেন, ‘‘ভোর ৪টে থেকে লাইন দিয়েছি। ১১টার সময় বলা হচ্ছে, কাউন্সিলরদের পাঠানো ২০ জনকেই শুধু টিকা দেওয়া হবে।’’ চন্দন দত্ত নামে এক ব্যক্তির বক্তব্য, ‘‘এখানে বলা হচ্ছে, শুধু হকারদের টিকা দেওয়া হবে। সেটা আগে জানানো হল না কেন?’’
এ দিকে, গেট তালা বন্ধ করে দেওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন স্বাস্থ্যকর্মী মুক্তা দাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাজ করার জন্য ভিতরে যেতে হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে টিকাকরণ। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, প্রতি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলরের পাঠানো তালিকা থেকে ২০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। ২৫-৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা পাবেন। ৩৯-৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা টিকা পাবেন শ্যামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বরো চেয়ারম্যান সুনীলবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘গভীর রাত থেকে লাইন দিয়েছেন কেন ওঁরা? এখন তো হকারদের টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। দু’দিন পরে সবাই টিকা পাবেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানানোও হয়েছে।’’ তাঁর সই করা কাগজ দেখিয়ে বাইরে থেকে এসে টিকা নেওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘২৫ থেকে ৩১, এই ওয়ার্ডগুলির ২০ জন করে হকারকে টিকা দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সে জন্য ব্যবসায়ী সমিতি বা কাউন্সিলরের কাছ থেকে পরিচিতির শংসাপত্র আনতে হবে। সে ভাবেই তা দেওয়া হয়েছে। কোনও অনিয়ম হয়নি।’’