প্রতীকী চিত্র।
‘কোভিড যোদ্ধা’ হিসেবে ৩০ হাজার জনের নাম উঠে এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের খাতায়। নামের তালিকা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়ে দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা-টিকা ওই ‘কোভিড-যোদ্ধা’দের উপরে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কারণেই প্রতিটি জেলাকে ‘ডেটাবেস’ তৈরি করে শুক্রবারের মধ্যে ই-মেল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌমিত্র মোহন। সোমবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “আমাদের জেলায় ৩০ হাজার কোভিড যোদ্ধার নাম উঠে এসেছে। তাঁদের সম্পূর্ণ তথ্যপঞ্জি একত্র করে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার আগে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরাই প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধা। ইতিমধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারাও গিয়েছেন। শুধু চিকিৎসক-নার্স নয়, ওই তালিকায় রয়েছেন আশাকর্মী, পুর স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পুলিশ থেকে সরকারি কর্মীরাও। এ ছাড়া, কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্তদের নামও ওই তালিকায় রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কো-মর্বিডিটি রয়েছে, এমন আক্রান্তদের খোঁজে জেলায় বিশেষ অভিযান চলছে। আশাকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছেন। পুজোর আগে পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমানে ১১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯১টি বাড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৮১.৫৪% শতাংশ বাড়ি ঘুরে আশাকর্মী স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছেন ২৮.৩৪ শতাংশ মানুষ। উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে ৫৩.১৯ শতাংশের, হৃদরোগে ও কিডনির অসুখে ভুগছেন যথাক্রমে ৮.৯ ও ১.৯৫ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট রয়েছে ৫.৫৩ শতাংশের, লিভারে সমস্যা রয়েছে ২.৩৪ শতাংশের। ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪৫। এ ছাড়া, অন্য রোগে ভুগছেন ৬,৯৪০ জন। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “যে যে রকম তথ্য দিয়েছেন, তাই তুলে এনেছেন আশাকর্মীরা। কেউ তথ্য লুকোলে কিছু করার নেই। পুরোটাই স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’
করোনাভাইরাসের টিকা হাতে এলে তা প্রয়োগের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ৩০ কোটি দেশবাসীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে চায় কেন্দ্র। তাঁদের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুরকর্মী-সহ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে থাকা কর্মীরা। পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে ৫০ বছরের বেশি বয়সি ও ৫০ বছরের কম বয়সিদের (যাঁদের একাংশের কো-মর্ডিবিটি রয়েছে) বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, প্রতি ‘কোভিড-যোদ্ধা’র বয়সের প্রমাণপত্র ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। বয়স দেখে টিকা দেওয়ার উপরে জোর দিতে চাইছে কেন্দ্র সরকার।
শুধু তথ্য সংগ্রহ বা চিহ্নিতকরণের কাজ নয়, টিকা প্রয়োগের জন্য ‘ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম’ (ইউআইপি)-এর পরিকাঠামোকে ব্যবহার করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। ‘ইউআইপি’র ডিজিটাল মঞ্চ ‘ইলেকট্রনিক ভ্যাকসিন ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক’ বা ‘ই-ভিন’ এর মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের আওতায় থাকা টিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিকেও (কোল্ড চেন পয়েন্ট) ‘ই-ভিন’-এর আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। যাতে কত জন কোভিড-যোদ্ধা টিকা পেলেন বা কত জন বাকি রয়েছেন, তা নজরদারি উঠে আসে।