মেমারি শহরে ছড়ানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। নিজস্ব চিত্র
জেলায় চতুর্থ করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলল মেমারি শহরে। বছর তেইশের ওই যুবককে শুক্রবার বিকেলে কাঁকসার মলানদিঘিতে কোভিড-১৯ (তৃতীয় ও চতুর্থ স্তর) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সরাসরি সংস্পর্শে থাকায় আক্রান্তের বাবা, মা, দিদি, কাকা ও কাকিমাকেও গাংপুরে ‘কোভিড-১৯’ (প্রথম ও দ্বিতীয় স্তর) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওই যুবক। সেখান থেকে তাঁকে ছাড়ার আগে মঙ্গলবার করোনা-পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিনি মেমারি ফিরে আসেন। শুক্রবার বিকেল ৩টে নাগাদ নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “মেমারির যুবক ও তাঁর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসা পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্ধমানের আক্রান্ত মহিলার সংস্পর্শে থাকা পাঁচ জনের নমুনাও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়ও জানান, মেমারি শহরাঞ্চলের ওই এলাকা স্থানীয় ভাবে গণ্ডিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আরও কারা ওই যুবকের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তার খোঁজ চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারকে হাসপাতালে পাঠানোর পরেই পুলিশ পাড়া ও সংলগ্ন এলাকা বাঁশ দিয়ে ঘিরতে শুরু করে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত যুবক মেমারি শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সোমেশ্বরতলা এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২৮ এপ্রিল কলকাতার মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তাঁর লিভার থেকে ‘সিস্ট’ বার করা হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ এপ্রিল তাঁর করোনা-পরীক্ষা হয়। সে পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিকঠাক আসেনি। ২ মে ফের পরীক্ষা হয়। সে দিন রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। মঙ্গলবার ফের পরীক্ষা করিয়ে বুধবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই পরিবারের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছতেই আধ ঘণ্টার মধ্যে পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে ওই যুবককে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ি লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার যাতায়াতের পথ ঘেরা হচ্ছে। গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় বাড়ির বাইরে বেরনো বা ঢোকা সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ জানিয়ে প্রচারও চলছে। ছাদে উঠলে বা বাড়ির বারান্দায় ঘুরলেও পুলিশ ভিতরে ঢুকতে বলছে। ওই বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শহরের অন্যতম বড় বাজার রয়েছে। তবে সে বাজার বন্ধ বা স্থানান্তর করার ব্যাপারে এ দিন রাত পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই যুবক দু’দিন ধরে হোম কোয়রান্টিনে থাকায় পরিবারের বাইরে কেউ তাঁর সংস্পর্শে আসেনি। তবে বাড়ির লোকেদের সংস্পর্শে পরোক্ষ ভাবে অনেকেই এসেছেন। তাঁদের খোঁজ চলছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশে কর্মরত খণ্ডঘোষের এক বাসিন্দাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৬ এপ্রিল বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসায় বাড়ির ছ’জনকে গাংপুরের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।