ফাইল চিত্র।
কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় আর ‘ব্যারিকেড’ দেওয়া হবে না, রাজ্যের তরফে এমন নির্দেশ এসেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রিত এলাকার অংশ হিসেবে কোনও বাড়ি বা বহুতলের সামনে ব্যারিকেড বা ব্লক করা উচিত হবে না। জেলাশাসকদের তিনি তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। রবিবার রাতে ওই নির্দেশ পাওয়ার পরে প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানান জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী।
সোমবার জেলাশাসক বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট জ়োনে ‘ব্যারিকেড’ করে বাড়ি ঘিরে রাখায় সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছিল। তাই ব্যারিকেড রাখা ঠিক হবে না বলে সরকারের তরফে নির্দেশ দিয়েছে। করোনা-আক্রান্তদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানা হবে।’’ পূর্ব বর্ধমানে এপ্রিলে প্রথম করোনা-আক্রন্তের খোঁজ মেলে খণ্ডঘোষে। তখন থেকে রবিবার পর্যন্ত নানা সময়ে জেলায় ১,৪৭৭টি জায়গা গণ্ডিবদ্ধ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশো এখনও গণ্ডিবদ্ধ রয়েছে।
করোনা-আক্রান্তের বাড়ি বা আবাসনকে চিহ্নিত করে সামনের রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড বা পুলিশের গার্ড-রেল দেওয়া হচ্ছিল। বেশ কিছু দিন ধরেই এই ব্যবস্থার বদল চাইছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, এর ফলে সংশ্লিষ্ট পরিবার বা আবাসনের বাসিন্দাদের ‘একঘরে’ হয়ে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। আতঙ্কও বাড়ছে। ‘আলাদা’ হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে করোনা-পরীক্ষা করাতে যেতে চাইছেন না। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অভিজিৎ চৌধুরীও সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসে জানান, ব্যারিকেড দিয়ে করোনা রোখা যাবে না। বরং, যাঁরা ব্যারিকেডের মধ্যে থাকছেন তাঁরা মনে করছেন, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরিন্দম রায়ের কথায়, ‘‘একটি বাড়ি বা আবাসন বা রাস্তাকে চিহ্নিত করে এখন সংক্রমণ রোখা যাবে না। উপরন্তু, সেই বাড়ি বা আবাসন নিয়ে অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে। এমনিতেই করোনা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে অনেকের মধ্যে। আতঙ্ক নয়, সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে রোগ প্রতিরোধে যুক্ত করতে হবে।’’ জেলা প্রশাসন জানায়, শহরাঞ্চলে ‘একঘরে’ করে রাখার প্রবণতা কম দেখা গেলেও গ্রামীণ এলাকায় নানা ক্ষেত্রে কোনও বাড়িকে চিহ্নিত করার পরে, নানা সমস্যার অভিযোগ উঠেছে। তা দূর করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এলাকার জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘যে কোনও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তথ্যের স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণ। আমার ধারণা, সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরে, সাধারণ মানুষ আরও বেশি করে স্বাস্থ্য দফতরকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবেন।’’