দুর্গাপুরে মহকুমা প্রশাসনের কাছে ইরানে আটকে পড়া যুবকের বাবা ও মা। নিজস্ব চিত্র
করোনা-থাবায় ইরানে সপ্তাহখানেক ধরে আটকে পড়েছেন দুর্গাপুর ও কলকাতার দু’জন বাঙালি যুবক। মঙ্গলবার মহকুমা প্রশাসনের (দুর্গাপুর) কাছে এমনটাই জানিয়েছেন দুর্গাপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা বিকাশ দাস নামে এক যুবকের বাবা-মা। তাঁদের দাবি, ছেলে-সহ মোট ২৫ জন একটি আবাসনে আটকে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এগারো জন ভারতীয়।
বিকাশের বাবা বিষ্ণুপদবাবু মঙ্গলবার জানান, ছেলে বর্ধমান এমবিসি ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করার পরে প্রথমে দুবাইয়ে চাকরি করতে যান। দু’বছর সেখানে থাকার পরে বছরখানেক আগে ইরানের তেহরানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে যান। মাস তিনেক আগে তিনি দুর্গাপুরে বাড়িও এসেছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে বিকাশ বাড়িতে ফোনে জানান, করোনা-থাবার জেরে অফিস বন্ধ। তাঁরা ২৫ জন তেহরানের অদূরে শহরতলি পারন্দে একটি আবাসনে আটকে পড়েছেন। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইরান আন্তর্জাতিক বিমান ওঠা-নামায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিকাশেরা দেশে ফিরতে পারছেন না।
বিকাশের বাবা বলেন, ‘‘সারাদিন ঘরে মনমরা হয়ে বসে থাকে ছেলে। খুব ভয়ে আছে। কী ভাবে ফিরবে বুঝতে পারছি না। কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য করুক, এটাই চাইছি।’’ তাঁর দাবি, কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা বিকাশের বন্ধু, পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেখানে আটকে রয়েছেন। এ দিন বিকাশের মা রিনাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে ‘মাস্ক’ পরেই ভিডিয়ো কল করছে। ও বলছে, ‘চিন্তা নেই’। কিন্তু আদতে ওর পাশাপাশি, আমরাও আতঙ্কে রয়েছি। মাস্ক পরেই বাজার যাচ্ছে। বাকি সময়টা বাড়িতেই আটকে থাকতে হচ্ছে।’’ ইরানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা কতটা হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিকাশের ভাই বিভাস।
এই পরিস্থিতিতে পরিবারটি যোগাযোগ করে দুর্গাপুর পুরসভার ২ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় কাউন্সিলর রমাপ্রসাদ হালদারের সঙ্গে। রমাপ্রসাদবাবু তাঁদের মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) কার্যালয়ে নিয়ে যান। এ দিন মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে জানান, তিনি ‘ভিডিয়ো কল’-এর মাধ্যমে বিকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার জেরে ওই দেশের পুরো পরিস্থিতিটাই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের আতঙ্কের পাশাপাশি, খাবারের পরিমাণও কমছে বলে জেনেছি। বিকাশরা ইরানে ভারতীয় দূতাবাসেও যোগাযোগ করেছেন। বিকাশের পরিবারের আর্জি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’