চলছে কদমা তৈরির কাজ। মানকরে। নিজস্ব চিত্র
পুজোর মরসুমে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এ বার করোনা-পরিস্থিতিতে বরাত কার্যত নেই। এই অবস্থায় সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মানকরের কদমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দু’জন দু’জন কারিগর এবং তাঁদের প্রায় ২৫ জন সহযোগী।
ওই দু’জন কারিগর হলেন সুনীল মণ্ডল ও অজিত রায়। তাঁদের দাবি, পারিবারিক ভাবে তাঁরা জেনেছেন ইংরেজ আমল থেকেই মানকরের কদমার কদর। পুজোর পাশাপাশি, বিয়ের তত্ত্বেও এক সময়ে কদমার ব্যবহার ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন কিছু পুজোর আগেই কদমা তৈরি হয়। শিল্পীরা জানান, দুর্গাপুজোয় সাধারণ ভাবে ছোট থেকে পাঁচ কেজি ওজনের, নানা ধরনের কদমার চাহিদা থাকে।
কিন্তু এ বার ছবিটা আলাদা, জানান দুই কারিগরই। প্রায় সাত বছর ধরে পারিবারিক এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগর সুনীল মণ্ডল জানান, এ বছর মার্চ থেকে করোনা-পরিস্থিতির জেরে অধিকাংশ গ্রামের গাজন, চব্বিশ প্রহর, মনসা পুজো বন্ধ ছিল। কোথাও পুজো হলেও জাঁকজমক একেবারেই ছিল না। ফলে, কদমার চাহিদাও কার্যত ছিল না। সুনীলবাবু, অজিতবাবুরা বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই আমাদের শারদ-মরসুম শুরু। দুর্গাপুজোর জন্য এই সময় থেকেই কদমার প্রচুর চাহিদা, বরাত থাকে। সারা বছরের রুটি-রুজি নির্ভর করে এই সময়টার উপরে। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি খুব খারাপ।’’ কারিগরেরা অবশ্য এই শিল্পে লাভ কতটা লাভ হয়, তা ভেঙে বলতে চাননি।
সুনীলবাবু ও অজিতবাবুরা জানান, দিনমজুরি-সহ নানা ধরনের কাজ করে জীবনধারণ করছেন তাঁরা। সমস্যায় পড়েছেন দুই কারিগরের সহযোগী আরও অন্তত ২৫ জন। তাঁদের কেউ দিনমজুরি করছেন। কেউ বা এলাকায় একশো দিনের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
ওই দুই কারিগরই জানান, গত বছর পুজোর মরসুমে প্রায় ৩০ কুইন্টাল করে কদমা তৈরি করেছিলেন। এ বছর একটাও বরাত মেলেনি এখনও পর্যন্ত। কারিগরেরা জানান, মূলত বিভিন্ন দোকান থেকে বরাত আসে। তার পরেই শুরু হয় কদমা তৈরি। সেই সব দোকানগুলিতে খোঁজ করে দেখা গেল, কদমার ক্রেতা এ বার কার্যত নেই। তোতন পাল নামে এক দোকান মালিক বলেন, ‘‘অনেকেই কদমার চাহিদা কমিয়ে ফেলেছেন। যিনি এক কেজির বরাত দিতেন, তিনি এ বার কিনছেন মোটে ২৫০ গ্রাম কদমা।’’ এই পরিস্থিতিতে কারিগরেরা জানান, অন্য বছর এই সময়ে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। কিন্তু এ বার কাজই শুরু হয়নি।তবে কারিগরদের আশা, দুর্গাপুজো আরও সামনে এলে, হয়তো বাজার কিছুটা ঘুরতে পারে।