biriyani

Katwa Hospital: কাটোয়ার হাসপাতালে বিরিয়ানির বিল ৩ লক্ষ টাকা! কী করে হল, চোখ কপালে কর্তৃপক্ষের

কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে কয়েক জন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার ভুয়ো বিল জমা করার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ১৮:২২
Share:

অভিযোগ, বিরিয়ানির জন্য ৩ লক্ষ টাকার বিল জমা দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রতীকী ছবি।

ভুয়ো নথি দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বিল জমা করা অভিযোগ উঠল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। তার মধ্যে বিরিয়ানির জন্যই নাকি ৩ লক্ষ টাকার বিল জমা পড়েছে! সমস্ত ভুয়ো এবং অসঙ্গতিপূর্ণ বিল ধরে মোট অঙ্কের পরিমাণ এক কোটি টাকার বেশি, তদন্তের পর এমনই রিপোর্ট জমা দিয়েছে হাসপাতালের অনুসন্ধান কমিটি। ওই রিপোর্ট সম্পর্কে জানানো হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও বিষয়টি দেখা বলে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কাটোয়া হাসপাতালে রোগীকল্যাণ সমিটির বৈঠক বসেছিল। ওই বৈঠকেই অনুসন্ধান কমিটির জমা দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই কমিটি জানিয়েছে, সব মিলিয়ে মোট ৮২টি ভুয়ো এবং অঙ্গতিপূর্ণ বিল চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও ওই ভুয়ো বিলের জন্য কোনও অর্থ মেটানো হয়নি বলেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের উপস্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘কাটোয়া হাসপাতালে বেশ কিছু ভুয়ো বিল জমা পড়েছে। যদিও ওই বিলের জন্য কোনও টাকা পেমেন্ট করা হয়নি। ভুয়ো বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। রাজ্য ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’’ হাসপাতালের সুপার শেখ শৌভিক আলম বলেন, ‘‘তদন্ত করে দেখা হচ্ছে গোটা বিষয়টি।’’

Advertisement

হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের জন্য সরকারি নিয়মে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এ জন্য চাওয়া হয় দরপত্র। ঠিকাদারদের থেকে প্রয়োজনে গাড়িভাড়া, খাবার, ওষুধ, আসবাবপত্র-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়া হয়ে থাকে। হাসপাতালের চাহিদা মেটানোর পর তার প্রেক্ষিতে নিজেদের বিল জমা করেন তাঁরা। তার ভিত্তিতেই তাঁরা টাকা পান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষের শেষের দিকে কাটোয়ার হাসপাতালে ঠিকাদারদের প্রাপ্য বিল আটকে যায়। ঠিকাদারদের জমা করা বিলের সঙ্গে দরপত্রের অসঙ্গতি দেখেই আর বিল মেটায়নি স্বাস্থ্য দফতর।

এর পর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের তৎকালীন সুপার অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ওই বিলের তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়ে জানায়, তিন জন ঠিকাদারের বকেয়া বিল পরীক্ষা করতে গিয়ে অসংখ্য ভুয়ো নথি ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে এক কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের ভুয়ো বিল জমা পড়েছে। যে ক’জন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ভুয়ো বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের মধ্যে পুষ্পেন্দু মাঝি নামে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিরিয়ানির জন্য ৩ লক্ষ টাকার বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

এ বিষয়ে পুষ্পেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিন লক্ষ টাকার বিল জমা দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। তার পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে পুষ্পেন্দু বলেন, ‘‘ওই বিল যদি ভুয়ো হয়, তা হলে তাতে কাটোয়া হাসপাতাল কর্ত্তৃপক্ষ কেন ‘ওয়ার্ক ডান’ বলে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে?’’ অন্য দিকে, কিংশুক মণ্ডল নামে অন্য এক ঠিকাদার এ নিয়ে মন্তব্য করতেই রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই, মন্তব্য করা অনুচিত।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট জমা পড়তেই ভুয়ো বিল জমা দেওয়ায় অভিযুক্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে। কাটোয়া হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভুয়ো নথি দিয়ে কোটি টাকার তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট দেখেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে। হাসপাতালের কোনও কর্মী জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কমিটির রিপোর্ট পৌঁছেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ভুয়ো বিলের রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে আমরা বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্ত হলে আরও কিছু জানা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement