প্রতীকী ছবি।
সম্প্রতি বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই এবং তার আগে যৌথ আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতিরা। সদর্থক বার্তা পাওয়া যাচ্ছে বাম শিবির থেকেও, এমনটাই দাবি রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও আন্দোলন-কর্মসূচি আয়োজনের ক্ষেত্রে বামেদের সঙ্গে সমন্বয়ের ‘অভাব’ দেখছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের নেতা, কর্মীদের একাংশ।
দলের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী সংবদামধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু বামেদের বুঝতে হবে, জোটের কর্মসূচি করতে হলে তা পরিকল্পনা করার সময় থেকেই কংগ্রেসকে ডাকতে হবে। এক সঙ্গে বসে মিছিল, জনসভা বা যে কোনও ধরনের আন্দোলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে হবে।’’ এমনটা হলে, কংগ্রেস এলাকাগত ভাবে সর্বশক্তি দিয়ে সেই সব আন্দোলনে যোগ দিতে পারবে বলে মনে করছেন দেবশবাবুরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কোথাও ‘সমন্বয়ের অভাব’ রয়েছে? দেবেশবাবুর জবাব, ‘‘জোট চাই, দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু এখন নেতাদের জোট হচ্ছে।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা, কর্মী জানান, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে বামেরা বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করছে। কিন্তু আয়োজনের একেবারে শেষ লগ্নে এসে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ফলে, কংগ্রেসের তরফে ‘সর্বশক্তি’ নিয়ে ঝাঁপানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, কর্মসূচির দিন দেখা যাচ্ছে, কয়েকশো বা কয়েক হাজার লাল পতাকার মিছিলে হাতে গোনা কংগ্রেসের পতাকা। এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণের কাছেও দল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। অথচ, তাঁদের দাবি, এই মুহূর্তে জেলায় ৩১,৭৫০ জন সক্রিয় দলীয় সদস্য রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে পথে নামাতেপারলে আন্দোলনের চেহারাও অন্য রকম হবে।
তবে সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বামেদের এক সঙ্গে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত অনেক দিন আগেই হয়েছে। সে অনুযায়ী কর্মসূচিও চলছে। জেলায় প্রতিটি কর্মসূচির কথা কংগ্রেসকে জানিয়েই ঠিক করা হচ্ছে। এর পরেও কোনও সমস্যা হলে, কংগ্রেসকে নিজেদেরই তাদের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।’’
২০১৬-র বিধানসভা ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার পরে, জেলায় বামেরা তিনটি এবং কংগ্রেস একটি আসনে জেতে। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দেখা যায়, জেলার সব ক’টি বিধানসভা আসনেই ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বামেরা নেমে আসে তৃতীয় স্থানে। চতুর্থ হয়েছিল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে ২০২১-এর ভোটে ‘জোট’ ছাড়া, দু’দলের কাছে কার্যত কোনও বিকল্প যে নেই, তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করছেন দু’পক্ষের নেতা-কর্মীরাই।