তৃণমূলের ‘যোগদান মেলা’। আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলে যোগ দিলেন মহিলা কংগ্রেসের অন্যতম সর্বভারতীয় সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী মিশ্র এবং সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আসানসোল পুরসভার দু’বারের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মানিক মালাকার। রবিবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত তৃণমূলের ‘যোগদান মেলা’য় রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে দু’জন তৃণমূলে যোগ দেন। মলয় বলেন, “উন্নয়নের কাজকর্মে যোগ দিতেই ওই দুই নেতা, নেত্রী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” যদিও, বিষয়টিকে আমল দিতে চায়নি কংগ্রেস ও সিপিআই।
ঘটনাচক্রে, কংগ্রেসের অন্দরে রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন ইন্দ্রাণী। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্র, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে আসানসোল উত্তর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি। কংগ্রেসের দলীয় রাজনীতিতে ইন্দ্রাণীর উত্থান কার্যত ‘নজরকাড়া’, এমনটাই বলে থাকেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। ২০১১-য় যুব কংগ্রেসে যোগ দিয়েই ইন্দ্রাণী সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। সে সময়ে রাহুলের নেতৃত্বে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের যুব পর্যবেক্ষক দলের সদস্যও হয়েছিলেন। ২০১৭-য় সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক মনোনীত হন। তিনি ওই পদেই ছিলেন এত দিন। ইন্দ্রাণী বলেন, “মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী নেত্তা ডিসুজাকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।”
পাশাপাশি, এ দিন সিপিআই নেতা মানিকও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। প্রবীণ এই সিপিআই নেতা ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র ছিলেন।
কিন্তু কেন দলবদল? ইন্দ্রাণী ও মানিক, দু’জনের কথাতেই উঠে এসেছে ‘উন্নয়ন’-এর প্রসঙ্গ। ইন্দ্রাণী বলেন, “কংগ্রেসে থেকে কাজের সুযোগ পাচ্ছিলাম না। রাজ্যের উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের কাজে যোগ দিতেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।” মানিকও বলেন, “রাজ্যের মানুষ এখন যাঁদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন, তাঁদের পাশে থাকাটাই উচিত বলে মনে করছি। দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করছে। সেই কর্মযজ্ঞে যোগ দিতেই এই সিদ্ধান্ত।”
সব ঠিক থাকলে, কিছু দিন পরেই আসানসোল পুরভোট হওয়ার কথা। তার আগে বিরোধী শিবিরের দুই নেতা, নেত্রীর তৃণমূলে যোগদান ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে আসানসোলে। যদিও, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে, আসানসোল পুরভোটের আগে তৃণমূল অগণতান্ত্রিক ভাবে দল ভাঙানোর খেলায় মেতে উঠেছে।” পাশাপাশি, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র সিংহ বলেন, “মানিক মালাকার গত এক বছর ধরে দলের কোনও কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি কী ভেবে দল ছেড়েছেন, তা জানি না। তবে আমাদের দল কোনও ব্যক্তির অভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে না।”
ঘটনাচক্রে, দুই নেতা, নেত্রী সম্পর্কে মলয় দাবি করেন, “ওই দু’জন তাঁদের পুরনো দলের সম্পদ ছিলেন। তাঁরা কয়েক দিন আগে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাই তাঁদের দলে নেওয়া হল।” রবিবারের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটক। কংগ্রেসের দল ভাঙানোর খেলার অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিজিৎ।