শহরের রাস্তা জুড়ে চলেছে রিকশা। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
রিকশা জালে আটকে গিয়েছে কাটোয়া। ভোটের আগে এই ইস্যুকে সামনে রেখেই কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস ও সিপিএম।
বছরের পর বছর আড়ে-বহরে কাটোয়া শহর অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ছে লোকসংখ্যা। শহরের চরিত্র বদলাতে শুরু করেছে। কিন্তু কমেনি শুধু রিকশার দাপাদাপি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রিকশা চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়া নিত্যদিনের ঘটনা। কর্মব্যস্ত সময়ে শয়ে শয়ে রিকশার দাপটে আটকে থাকে রাস্তাঘাট। যদিও কাটোয়া পুরসভা অনুমোদিত রিক্সার সংখ্যা হল মাত্র ৭৫৭। তবে আশেপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রতি দিন কয়েকশো রিকশা শহরের ভিতর ঢোকে। এছাড়াও রয়েছে নম্বরবিহীন রিকশার দাপাদাপি। শহরের এক চিকিৎসক বলেন, “আমাকে তো প্রায়ই রিকশায় ধাক্কা লাগা রোগীর চিকিৎসা করতে হয়।”
বিভিন্ন রিকশা ইউনিয়নের নেতাদের মতে চালকদের একাংশের যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বেআইনি রিকশাগুলি কোনও ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রনে নেই বলে জানিয়ে তাঁদের দাবি, সেগুলি নদিয়ার কালিগঞ্জ, নাকশিপাড়া, মুর্শিদাবাদের সালার, বড়ঞা, বেলডাঙা এলাকা থেকে সকালবেলা কাটোয়াতে আসে। রাতে ফিরে যায়। তাঁদের আরও দাবি, এর আগে বেআইনি রিকশাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানিয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। আদালত পুলিশকে বেআইনি রিকশা নিয়ন্ত্রনের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
শহরে রিকশাগুলির কোনও নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। গোটা শহর খুঁজে পুরসভা ভবন ছাড়া আর কোথাও রিকশার ভাড়া তালিকাই টাঙানো নেই। সেই তালিকা আবার ১৯৯৫ সালে টাঙানো হয়েছিল। তার পর থেকে বহু বার ভাড়া বাড়লেও সেই ভাড়া তালিকায় পরিবর্তন হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯৯৫ সালে ভাড়া তালিকা প্রকাশের পরেই একদল দুষ্কৃতী পুরভবনে ঢুকে হামলা চালায়। অভিযোগ, ওই ঘটনার পর দুষ্কৃতীদের বদলে পুরকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছিল পুলিশ। পুরকর্তাদের দাবি, সেই সময় তৎকালীন মহকুমা প্রশাসন। এরপর মাঝে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজ হয়নি। গত বছর নভেম্বরে মহকুমা প্রশাসন জানায়, আলোচনার মাধ্যমে ভাড়ার তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু সেই আলোচনা এখনও হয়নি। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, রিকশায় পা দিলেই ২০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়। দিনের বেলা শহরের মধ্যে যেতে হলে ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ভাড়া নেয় রিকশা চালকরা। শহরের শেষ প্রান্তে যেতে সেই ভাড়া বেড়ে হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। রাত হলে ভাড়ার কোনও ঠিক থাকে না।
কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায়ের অভিযোগ, “ভাড়া ঠিক করার জন্য আমরা গত চার মাসের মধ্যে মহকুমা শাসককে দু’বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনও সদর্থক ভূমিকা পালন করেনি। গত ২০ বছর ধরে প্রশাসন শুধু হচ্ছে হবে বলেই কাটিয়ে যাচ্ছে।” যদিও মহকুমা প্রশাসনের কোনও কর্তাই এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
শহরে রিকশার নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার জন্য কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভাকেই দায়ী করছে তৃণমূল ও সিপিএম। সিটু নেতা তথা সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য সুজিত রায়ের দাবি, “কংগ্রেস ভোটের রাজনীতি করার জন্য ভাড়ার তালিকা তৈরি করেনি। নতুন করে রিক্সা চালকদের অনুমতিও দেয়নি।” তৃণমূলের কাটোয়া পুরসভার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কংগ্রেস নেতৃত্ব রিকশা নিয়ন্ত্রনে কোনও উদ্যোগই নেয়নি। সে জন্যই এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।”
জেলার অন্যান্য শহরে ব্যাটারি চালিত টোটো চললেও, কাটোয়াতে শহরের ভিতরে ঢুকতে এখনও রিকশাই অন্যতম ভরসা। সেই যানকে নিয়ন্ত্রনে আনুক প্রশাসন। পুরভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির থেকেই এই প্রতিশ্রুতিই চাইছেন কাটোয়াবাসী।