প্রতীকী ছবি।
শো-কজ, জরিমানা করা হয়েছিল আগেই, এ বার পূর্ব বর্ধমানের কালনা ২ ব্লকের ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে মহকুমা খাদ্য দফতর। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ডিলার সুশীল ঘোষ দলের বড়ধামাস পঞ্চায়েতের ‘মনিটরিং কমিটি’র চেয়ারম্যান। সোমবার কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু একটি সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনায় গোল বেধেছে দলের অন্দরে।
তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মহকুমা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সুশীলবাবু বিধায়কের ‘বিরোধী গোষ্ঠী’র লোক বলেই তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য দাবি করেন, ওই ডিলার যে তৃণমূলের লোক, তা জানেন না তিনি।
এ দিন ওই বৈঠকে রেশনের দোকানে প্রশাসনের সাম্প্রতিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় বিধায়ককে। তিনি বলেন, ‘‘নানা রকম গাফিলতির কারণে মহকুমাশাসক, বিডিও, খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা কয়েকজন রেশন ডিলারকে শো কজ করেছিলেন। এক জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। যে কাজের জন্য তাঁকে জরিমানা করা হয়েছিল, সে কাজ ঠিকঠাক করতে পারছেন না বলে খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন।’’ ওই ডিলারের নামও জানান তিনি। যদিও তৃণমূলের কালনা ২ ব্লক সভাপতি প্রণব রায়ের অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশ ‘পরিকল্পিত ভাবে’ হেনস্থা করেছে ওই ডিলারকে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ বেজ এক জন ইনস্পেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে ওই রেশন দোকান পরিদর্শনে যান। তবে ডিলার সুশীলবাবু হাজির ছিলেন না। কালনা থানায় লিখিত অভিযোগে খাদ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, দোকানের কর্মচারীদের কাছে রেজিস্টার চাওয়া হলে তাঁরা জানান, মালিক এসে দেবেন। আধ ঘণ্টা পরে ডিলার এসে রেজিস্টার ছুড়ে দেন বলে অভিযোগ। ওই প্রতিনিধিদের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুশীলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বারবার দোকানে এসে আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছিল। শনিবার আমার কাছে স্টক খাতা চাওয়া হয়। বিরক্ত হয়ে ইনস্পেক্টরকে বলি, খাতাপত্র নিয়ে চলে যান আপনারা। আমি আর ব্যবসা করব না। এর পরে আমার হাত থেকে খাতা পড়ে গেলে, বলা হয় আমি ওঁদের হেনস্থা করেছি।’’
প্রণববাবু বলেন, ‘‘সুশীলবাবু বড়ধামাস পঞ্চায়েতের দলের মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান। খবর পেয়েছি তাঁকে প্রশাসনের একাংশ পরিকল্পিত ভাবে হেনস্থা করেছে। বিষয়টি যেখানে বলার বলব।’’ রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি পরেশনাথ হাজরার দাবি, ‘‘অভব্য আচরণ নয়। ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এমন সমস্যা হয়েছে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কালনা মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ বেজ। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত সিদ্ধান্ত সংবাদ মাধ্যমকে জানানো যায় না। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক আবীর বালিও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘ওই রেশন ডিলার অভব্য আচরণ করেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস জানান, আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।