—প্রতীকী চিত্র।
মনোনয়নের প্রক্রিয়া চার দিন পার। তৃণমূলের তরফে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়নি মঙ্গলবার পর্যন্ত। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রার্থিতালিকা নিয়ে কোনও পক্ষের মধ্যে ‘মতানৈক্য’ যাতে না থাকে, সে জন্য বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বেশ কয়েক বার বৈঠকের পরেও রায়না ও মেমারি বিধানসভা এলাকায় পঞ্চায়েতের প্রার্থী নিয়ে মনোমালিন্য মেটেনি। মঙ্গলবার দুপুরে বর্ধমানের উল্লাস মোড়ের কাছে একটি হোটেলে ওই দুই বিধানসভার ব্লক সভাপতি ও বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা সভাপতি। ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক ও দলের ভোটকুশলী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, মে-র শেষ দিক থেকেই বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন জেলা সভাপতি। তৃণমূলের হিসেবে, আউশগ্রাম ২, রায়না ১ ও ২, মেমারি ১, মন্তেশ্বর ব্লকে সভাপতিদের সঙ্গে বিধায়কের ‘দূরত্ব’ রয়েছে। এ ছাড়া, মঙ্গলকোট, জামালপুর, গলসি, ভাতার-সহ কয়েকটি এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে জেলা সভাপতির বৈঠকে সব পক্ষেরই নামের তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পরে ভোটকুশলী সংস্থার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। শেষে জেলা থেকে একটি তালিকা করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই নাম চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূলের দাবি, রায়নার দু’টি ব্লকের ক্ষেত্রেই ব্লক সভাপতি ও বিধায়কেরা তাঁদের তালিকা নিয়ে অনড় থাকায় বারবার বৈঠক করেও জট কাটেনি। একই পরিস্থিতি মেমারি ১ ব্লকেও। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ওই তিন ব্লক নেতৃত্ব ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা সভাপতি। বিকেল পর্যন্ত সে জট কাটেনি। এ দিকে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য হাতে রয়েছে আর দু'দিন। সিপিএম, বিজেপি থেকে কংগ্রেসও প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করে মনোনয়ন জমা দিয়েছে, সেখানে শাসক দল সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে কেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না হওয়ায় কর্মীদের একাংশের মধ্যে হতাশাও তৈরি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, ‘নবজোয়ার যাত্রা’ ঘিরে দলের মধ্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ‘ছন্নছাড়া’ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জেলা স্তরে কোনও সিদ্ধান্তই হচ্ছে না বলেও অভিযোগ।
তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, ২০১৮ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় ২৮% শতাংশ আসনে বিরোধী কোনও প্রার্থী ছিল না। যে ৭২% আসনে প্রার্থী ছিল, তার মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল দলেরই ‘গোঁজ’ প্রার্থী। বিশেষ করে মেমারি, ভাতার ও রায়নায় নির্দল প্রার্থীরা সংখ্যায় বেশি ছিল। এ বার পঞ্চায়েত স্তরে ‘নবজোয়ার যাত্রা’র মাধ্যমে বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে। দলের বিভিন্ন ‘গোষ্ঠীও’ প্রার্থীর জন্য নাম জমা দিয়েছে। দলের একাংশ মনে করছে, একে সব ব্লকে প্রার্থী নিয়ে মনোমালিন্য কাটেনি, তার উপরে ‘গোঁজ’ প্রার্থী এড়াতেও দল এই কৌশল নিয়ে থাকতে পারে। বিরোধীদের অনেকের দাবি, প্রার্থিপদ না পেলে তৃণমূলের একাংশ তাদের দলে যোগ দিতে যোগাযোগ করত। প্রার্থী ঘোষণা না করে দলবদলও আটকে দিল তৃণমূল।
এই পরিস্থিতিতে, প্রচারে নামতে দেরি হওয়ায় কর্মীদের যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, তেমনই চিন্তায় রয়েছেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বিদায়ী সদস্যেরাও। দল ফের প্রার্থী করবে কি না, সে নিয়ে ভাবনায় তাঁরা। এ দিন কালনায় এক তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘খুব চিন্তায় রয়েছি। দল শেষ পর্যন্ত কী করবে জানি না।’’ ব্লক স্তরের নেতাদের অনেকের দাবি, পঞ্চায়েত স্তরের অনেক নেতা অনবরত ফোন করছেন। কিন্তু তাঁরাও তাঁদের কোনও সদুত্তর দিতে পারছেন না। তৃনমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঠিক সময়ে দল প্রার্থী ঘোষণা করবে।’’