খড়ি নদী নিয়ে নালিশ। —নিজস্ব চিত্র।
খড়ি নদী দূষণের প্রতিবাদে সরব নদীর তীরবর্তী বর্ধমান ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে ভাতারের নর্জা মোড়ে নদীর গা ঘেঁষে তৈরি হওয়া কাগজ কলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর প্রতিবাদ করলেও প্রতিকার মেলেনি। সময় যত এগোচ্ছে, খড়ির নদীর অবস্থা ততই ভয়ানক হচ্ছে। নদীকে বাঁচাতে নাগরিক মঞ্চ গড়ে তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। সংগঠনের উদ্যোগে জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতি এবং জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে।
বর্ধমান ১ ব্লকের ক্ষেতিয়া পঞ্চায়েতের একটি গ্রামের বাসিন্দা সত্যনারায়ণ হাজরা, কণককান্তি সোমের দাবি, ‘‘সাত-আট বছর ধরে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। এখন সেই জল ব্যবহার করলে নানা ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। সম্প্রতি এই নদীর জল খেয়ে একাধিক গরু ও ছাগলের মৃত্যু হয়েছে।’’ গ্রামবাসীর দাবি, ওই কাগজ কল তৈরির আগে খড়ি নদীই ছিল বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষাবাদের লাইফ লাইন। নদীর জল যেমন সেচের কাজে ব্যবহৃত হত, তেমনই সেই জল পানও করতেন অনেকে। গ্রামের পর গ্রামের মানুষ নদীর জল ব্যবহার করতেন রান্না-সহ নিত্য কাজে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহও করতেন অনেকে। এখন সে সব অতীত। দূষণের জেরে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। নদীও সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত বিষয়টি জানলেও প্রতিকার হচ্ছে না।
নদীর তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা খড়িকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। বর্ধমান ১ ব্লকের সোনাপলাশি এলাকার নাগরিক জ্যোতিপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খড়ি নদী ভাগীরথীতে গিয়ে মিশেছে। নর্জা মোড়ের ওই কাগজ কলের বর্জ্য যে ভাবে নদীকে দূষিত করেছে, তাতে আগামী দিনে ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। শুধুমাত্র পাঁড়ুই নয়, বর্ধমান ১ ব্লকের কুবাজপুর-সহ বহু গ্রামের মানুষ চরম সঙ্কটে পড়েছেন। ১৯৭২-এ খড়ি নদীতে সেচ প্রকল্প চালু হয়েছিল। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নদীর জল চাষের কাজে ব্যবহার করলেই ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
জেলা সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, ‘‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। আগামী ৫ জুলাই দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে বিডিও-দের নিয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’ কাগজ কল কর্তৃপক্ষ জানান, দূষণ নিয়ে তাঁরা সতর্ক। কারখানার নির্গত জল পরিস্রুত করেই বাইরে ফেলা হয়।