—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তৃণমূল পরিচালিত রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁর কর্মস্থল, ইসিএলের অমৃতনগর কোলিয়ারিতে আধিকারিকদের নিগ্রহ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সম্প্রতি তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি বিষ্ণুদেব দুনিয়ার বিরুদ্ধে কাজোড়ায় একটি কোলিয়ারি কার্যালয়ে ঢুকে এক কর্মীকে মারধর ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ খনিকর্মীদের অনেকে। তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত বলে দাবি করেছেন।
অমৃতনগর কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ সাবির নামে ওই কর্মী তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে চাকরিতে নিয়োগের সময়ে জমা দেওয়া জন্ম শংসাপত্র নিয়ে একটি অভিযোগ ওঠে। তখন সংস্থার ভিজিল্যান্স বিভাগ অ্যাপেক্স মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শারীরিক পরীক্ষা করে জন্মের দিন নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক আধিকারিকের দাবি, সাবিরের ভাই এই কোলিয়ারিতেই কাজ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৬৯ সালে। সাবিরের বাবাও এখানে কাজ করতেন। তাঁর বাবার সার্ভিস রেকর্ডে সাবিরের জন্ম ১৯৬৫ সালে লেখা আছে। বাবার মৃত্যুর পরে সাবির ২০০৩ সালে নিকটাত্মীয় হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন ঝাড়খণ্ডের এক বেসরকারি স্কুলের ছাত্র হিসাবে তিনি যে নথি জমা দেন, সেখানে তাঁর জন্মের সাল ১৯৭৫ রয়েছে। আবার, তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তিনি রানিগঞ্জের একটি উচ্চ
বিদ্যালয়ে পড়তেন।
ওই আধিকারিকের দাবি, এ ধরনের তথ্যগত ভ্রান্তির কারণেই ভিজিল্যান্স বিভাগ ওই সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী নির্দেশিকা জারি করা হয়। বছরখানেক আগে সাবির কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। হাই কোর্ট প্রথমে ইসিএলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে হাই কোর্ট সাবিরের শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম নির্ধারণের নির্দেশ বাতিলের আর্জি খারিজ করে। তার পরে সাবির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান। ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে।
কোলিয়ারি সূত্রের দাবি, হাই কোর্টে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে সংস্থার তরফে সাবিরকে শারীরিক পরীক্ষা না করাতে চাওয়ার কারণ দর্শানোর জন্য পাঁচ বার নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি তা নিতে চাননি। অভিযোগ, এর পরে বুধবার সাবির কাজে যোগ দিতে এলে, তাঁকে নিষেধ করা হয়।
তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে শ’খানেক অনুগামীকে নিয়ে এসে তিনি কার্যালয়ে হামলা চালান। হামলাকারীর দলে
পাঁচ জন খনিকর্মীও ছিলেন বলে অভিযোগ। কোলিয়ারির এজেন্ট উমেশ পণ্ডিত রানিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, পার্সোনেল ম্যানেজার, ম্যানেজার, নিরাপত্তা আধিকারিক-সহ ৯ জন আধিকারিককে নিগ্রহ করা হয়েছে। হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তাতে কর্মী-আধিকারিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। খনিক এক আধিকারিকের দাবি, সাবির তাঁদের হুমকি দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না এবং তাঁকে কাজে যোগ দিতে দিতে হবে।
রবিবার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য সাবিরকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব দেননি তাঁকে পাঠানো মেসেজেরও। সিটু নেতা মনোজ দত্ত, বিএমএসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা যুগ্ম সম্পাদক সৈকত চট্টোপাধ্যায়দের দাবি, তৃণমূলের উচ্চ পদে থাকা লোকজন দুর্নীতিতে জড়িত, তা বার বার প্রমাণ হচ্ছে। সাবির ওই কোলিয়ারির তৃণমূল অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের উচ্চ পদেও আছেন। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের পাল্টা দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দল বা দলের শ্রমিক সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। যা ঘটেছে, তার দায়িত্ব সাবিরকেই নিতে হবে।’’ পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।