কান পাতলেই মিলবে চাষের নানা পরামর্শ। —ফাইল চিত্র
ফসল ফলানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাজারের হাল-হকিকত জানা নেই। সামনের ক’টা দিন এলাকার আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে, ধারণা নেই সে ব্যাপারেও। এমন সব সমস্যার মুখে নিয়মিতই পড়েন চাষিরা। তা দূর করতে কমিউনিটি রেডিও তৈরিতে উদ্যোগী হল কৃষ দফতর।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানের কৃষি খামারে স্টেশনটি হবে। সেখান থেকে শুধু বর্ধমান নয়, বীরভূম ও বাঁকুড়ার বড় অংশের চাষিরাও উপকৃত হবেন। স্টেট এগ্রিকালচারাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এসএএমইটিআই)-এর ডিরেক্টর মানস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জেলা স্তরে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলা হয়েছে। রাজ্যের মাধ্যমে এক-দু’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, চাষের ধরন বদলে গিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। দৈনন্দিন আবহাওয়ার খবর থেকে শুরু করে কোন মাটিতে কী ফসল চাষ করা যেতে পারে, চাষিরা এখন সে সব জেনে চাষ করতে উৎসাহী। কিন্তু হাতের কাছে সব সময় কৃষি বিশেষজ্ঞ থাকেন না। অথচ, রেডিও চালু করা গেলে চাষি খেতে কাজ করতে করতেও নানা খবরাখবর পেয়ে যাবেন। তাছাড়া বাজারের হাল-হকিকত জেনে সেই মতো পরিকল্পনা করে বেশি লাভও ঘরে তুলতে পারবেন চাষি। এ সব দিক মাথায় রেখে চাষিদের জন্য কমিউনিটি রেডিও চালুর উদ্যোগ হয়েছে বলে মন্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দৈনন্দিন কৃষি সম্পর্কিত খবরের পাশাপাশি চাষিদের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থাও রাখা হবে বলে ভাবা হয়েছে।’’ কবে নাগাদ স্টেশনটি চালু হবে সে ব্যাপারে মন্ত্রী কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের কাজে সবাই ব্যস্ত থাকায় উদ্যোগে একটু ভাটা পড়েছিল। ফাইল না দেখে এখনই বলা সম্ভব হবে না।’’
এসএএমইটিআই-এর ডিরেক্টর মানসবাবু জানান, কমিউনিটি রেডিও চালুর প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের অনুমোদন দরকার। প্রতিরক্ষা, বিমানমন্ত্রকের ছাড়পত্র প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘জেলা স্তরে যা-যা করার ছিল, সব হয়ে গিয়েছে। এ বার রাজ্যের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র এসে গেলে স্টেশন গড়া এবং অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক ঠিক করে ফেলা হবে।’’ জেলার সহ-কৃষি আধিকারিক (প্রশিক্ষণ) গৌতম সেনগুপ্ত জানান, কৃষি খামারের কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি ভবন প্রাথমিক ভাবে স্টেশনের জন্য বাছা হয়েছে। দরকার মতো সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ২০০২ সালের ডিসেম্বরে শুধু শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কমিউনিটি রেডিও চালুর অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে বিভিন্ন অলাভজনক সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকেও এর আওতায় আনা হয়। কমিউনিটি রেডিও দিন-দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠ। সাধারণত যাঁরা শ্রোতা তাঁরাই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পরিবেশিত হয় সামাজিক ও শিক্ষামূলক বিষয়। ফলে, অনুষ্ঠানগুলি সহজেই এলাকাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এফএম ব্যান্ডে অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়ায় শ্রবণমানও খুব উন্নত মানের হয়। রাজ্যে প্রথম কমিউনিটি রেডিও স্টেশনটি চালু হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল। পরে ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ইনস্টিটিউট’ এবং একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চালু হয় কমিউনিটি রেডিও।২০১৪ সালে বর্ধমান শহরে কমিউনিটি রেডিও গড়ায় উদ্যোগী হয়েছিল বর্ধমান জেলা পরিষদ। ঠিক হয়, শহরের যে কোনও দিকে প্রায় দশ কিলোমিটার জুড়ে নানা শিক্ষামূলক এবং সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে প্রচার করা হবে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক স্টেশন চালুর অনুমোদন দেয়নি। কারণ, বর্তমান আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির মতো প্রতিষ্ঠানকে কমিউনিটি রেডিও চালুর অনুমোদন দেওয়া যায় না। এ বার কৃষি দফতরের হাত ধরে জেলায় কমিউনিটি রেডিও চালু হয় কি না, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন বাসিন্দারা।