স্নাতকোত্তর বিভাগে ভর্তি নিয়ে অসঙ্গতি আটকানোর জন্যেই কি সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সচিব, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারকে নিগৃহীত হতে হল— বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ঘুরছে এই প্রশ্ন। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও কর্তৃপক্ষ ‘চুপ’ থাকায়, শিক্ষক, আধিকারিক থেকে কর্মচারী সংগঠনের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের জিজ্ঞাসা, তাহলে কর্তৃপক্ষের মদতেই কী টিএমসিপি নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে রামিজের বাড়বাড়ন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী রেজিস্ট্রার তোফাজ্জল হোসেনের যদিও দাবি, ‘‘ঘটনা জানার পরেই এসএমএস করে বলেছিলাম, ইসির বৈঠকের শেষে দেখব। তার আগেই উনি সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে গেলেন।” বৃহস্পতিবার দুপুরে গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ‘কম্পোজিট’ ভবনের তিনতলায় এক রিসার্চ স্কলারের ডেটা আপলোডিং নিয়ে শুভপ্রসাদবাবুর সঙ্গে আমিনুলের কথা কাটাকাটি হয়। তার পরেই তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
আগেও স্নাতকোত্তরে ভর্তি নিয়ে শুভপ্রসাদবাবু ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। অগস্টে উপাচার্যকে ভর্তি সংক্রান্ত ১৭টি বিষয় নিয়ে হোয়াটস অ্যাপ করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, স্নাতকোত্তরে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয় নির্দিষ্ট কমিটি। যা অনুমোদন করেন উপাচার্য। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করার সাহস পায় কী করে ওই ছাত্র নেতা! তিনি আরও দাবি করেন, বেসরকারি সংস্থার বদলে ২০১৭ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া হচ্ছে, তাতেই টিএমসিপির ওই গোষ্ঠীর রাগ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্মৃতিকুমার সরকার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হয়ে আসার পরে স্নাতকোত্তরে ভর্তির বিষয় থেকে বিজ্ঞানের ফ্যাকাল্টি সচিবকে বাদ দিয়ে দেন। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ভর্তির কাজ শুরু হয়। এ নিয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে অডিট প্রশ্ন তোলে। নিমাইবাবু উপাচার্য হয়ে নতুন করে দরপত্র করে গত বছর থেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। গত আর্থিক বছরের শেষে শুভপ্রসাদবাবু একটি রিপোর্টে জানান, স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য ৪০ শতাংশ আসনে পরীক্ষা হয়। তাতে অসঙ্গতি দেখা গিয়েছে। বিস্তারিত তদন্তেরও দাবি জানান তিনি। তাঁর দাবি ছিল, স্নাতকোত্তরে ভাল নম্বর পাওয়া অনেক পরীক্ষার্থীর নাম ভর্তির তালিকায় পিছনে রয়েছে, অথচ তুলনামূলক ভাবে কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের নাম উপরে রয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে ‘অনলাইন পরীক্ষা কমিটি’ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাকে বাদ দিয়ে নতুন করে দরপত্র ডাকার প্রস্তাব দেন। এই সময়েই রেজিস্ট্রারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেন সরকে।
শুভপ্রসাদবাবুর উপর আক্রমণ এই প্রথম নয়। ২০১১-র সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয়ে অনশনে বসেছিলেন তিনি। সেই সময় অসম সরকার থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানান। ২০১৪ সালেও তাঁর উপর আক্রমণ হয়। এ দিন তিনি বলেন, “যেখানে মেরুদন্ড আছে, সেখানেই আক্রমণ হয়। আশ্চর্য লাগছে, আধিকারিক আক্রান্ত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌনতা দেখে।’’ তাহলে কী ভর্তির অসঙ্গতিতে কর্তৃপক্ষেরও মদত রয়েছে?’’
অভিযুক্ত আমিনুলের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ভর্তি শেষ হওয়ার পরে উনি ভর্তি নিয়ে অসঙ্গতি আটকেছেন বলে দাবি করছেন। এতদিন ধরে তাহলে কী উনিই গোলমাল করে এসেছেন?’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোন আধিকারিক কী করবেন, সেটা দেখা কোনও ছাত্রের কাজ নাকি?’’