গ্যাস সংস্থার ফিলিং স্টেশনে বিক্ষোভ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ তিনেক ধরে সিএনজি-র আকাল চলছে জেলায়। তার জেরে সমস্যায় পড়েছেন সিএনজি-চালিত অটো-সহ নানা যানবাহন। সমস্যা মেটানোর দাবিতে বারবার বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে জেলার দুই শহরে। বুধবার ফের সিএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবিতে বিক্ষোভ হল আসানসোল ও দুর্গাপুরে। আসানসোলের কল্যাণপুরে বেসরকারি গ্যাস সংস্থার ফিলিং স্টেশনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। দুর্গাপুরে রাস্তা অবরোধ করেন অটো চালকেরা। প্রশাসনের আশ্বাস, সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।
ন্যূনতম মজুরি, প্রভিডেন্ড ফান্ড এবং ইএসআইয়ের সুবিধার দাবিতে ২৯ জুন তৃণমূলের নেতৃত্বে ওই সংস্থায় কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন গ্যাস সরবরাহের গাড়ি চালকেরা। দিন তিনেক আন্দোলনের পরে সংস্থার তরফে আশ্বাস পেয়ে তা তুলে নেন চালকেরা। তবে পর দিনই এক চালককে কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ফের আন্দোলন শুরু হয়। প্রশাসনের তরফে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। তবে সমস্যা মেটেনি।
ওই গ্যাস সংস্থার কর্তাদের দাবি, গ্যাসের গাড়ি যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে আন্দোলনে নামছেন চালকেরা। এর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই বিক্ষোভে শামিল গাড়ির চালকদের অন্যত্র বদলি করতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ওই চালকদের দিয়েই গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এ নিয়ে টানাপড়েনের জেরে কার্যত বন্ধ রয়েছে সিএনজি সরবরাহ।
এ দিন সকালে কল্যাণপুর গ্যাস ফিলিং স্টেশনের গেট আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। শামিল হন ২৬ জন গাড়ির চালকও। স্টেশনে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয় সংস্থার শ্রমিক-কর্মীদের। সংস্থার এক আধিকারিক গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়ান। সকাল ১০টা নাগাদ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা ও পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত সিএনজি সরবরাহ শুরু করার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।
গ্যাস না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন সিএনজি-চালিত অটো ও গাড়ির চালকেরা। দুর্গাপুরে অটো চালকেরা গত কয়েক দিন ধরেই সিটি সেন্টারের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেছেন। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা পুরসভা মোড় ও ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডে অবরোধ শুরু করেন। সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে ঢোকা-বেরোনোর পাঁচটি জায়গা আটকে দেওয়া হয়। বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়া নানা যানবাহন আটকে পড়ে। অন্য রাস্তা দিয়ে সেগুলিকে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। ভোগান্তিতে পড়েন বহু যাত্রী।
পুলিশ এলেও অবরোধ ওঠেনি। অবরোধে আটকে যায় দুর্গাপুরের মেয়র পারিষদ তথা আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িও। তিনি হেঁটে পুরসভায় যান। পরে পুরসভার পাশে এক কর্মসূচিতে প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘অটো চালকদের দাবিকে আমরা সমর্থন করি। তবে এ ভাবে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলার বিরোধী আমরা।’’ এর পরে তিনি মঞ্চ থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ জানাতে থাকেন অটো চালকেরা।
বিকেলে প্রভাতবাবু অটো চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলের সঙ্গে দেখা করেন। ছিলেন এসিপি (পূর্ব) আরিশ বিলাল। দু’দিনের মধ্যে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস মিলেছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।
গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ আসানসোলের অটো চালকেরাও। প্রেমজি প্রসাদ নামে এক চালকের কথায়, ‘‘অটো নিয়ে রাস্তায় নামতে পারছি না। সংসারে টানাটানি শুরু হয়েছে।’’ এসবিএসটিসি-র আসানসোল ডিপোর এক আধিকারিক জানান, গ্যাসের অভাবে ডিপোর ৪০টি সিএনজি-চালিত বাসের মধ্যে এখন ১৯টির বেশি চালানো যাচ্ছে না। অবিলম্বে সমস্যা মেটানোর দাবি তুলেছেন আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, ‘‘এখান থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে, অথচ এখানেই সরবরাহ করা হচ্ছে না। এটা অন্যায়।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’’