গত বছর ঘটনার দিন ‘চেন খুনি’কে ধরে অনির্বাণ। ফাইল চিত্র
কয়েকদিন অন্তর একটি করে ঘটনার খবর আসছে। ততই উদ্বেগ বাড়ছে পুলিশ-কর্তাদের। নানা ধরনের পদক্ষেপ করেও তখনও ধরা যায়নি ‘চেন-খুনি’কে। সেই রকম সময়েই এক বিকেলে সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির জোরে তাকে ধরে ফেলেছিলেন কালনার এক সিভিক ভলান্টিয়ার। কালনা আদালত একটি মামলায় সেই ‘চেন-খুনি’ কামরুজ্জামান সরকারের ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় তিনি স্বস্তি পেয়েছেন, জানাচ্ছেন বেগপুর পঞ্চায়েতের কাদিপুর এলাকার ওই সিভিক ভলান্টিয়ার অনির্বাণ ঘোষ।
২০১৯ সালের ২ জুনের সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে অনির্বাণ জানান, তখন আততায়ীকে ধরার জন্য মরিয়া চেষ্টায় নেমেছিল পুলিশ। বিভিন্ন রাস্তায় নাকাবন্দি করা হচ্ছিল। এক সিসিটিভি ফুটেজে মোটরবাইকে যাওয়া ‘চেন-খুনি’র একটি ছবি মিলেছিল। কালনার পুরশ্রী হলে জেলার পুলিশ-কর্তাদের উপস্থিতিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে আততায়ীর চেহারা কেমন, সে কী রকম মোটরবাইক ব্যবহার করে, কেমন হেলমেট পরে— পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের সে সব দেখানো হয়েছিল।
অনির্বাণ জানান, ঘটনার দিন তিনি মেদগাছি-সহজপুর রাস্তায় কর্তব্যরত ছিলেন। বিকেল ৩টে নাগাদ এক মোটরবাইক আরোহীকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটকান। বুলবুলিতলা ফাঁড়িতে খবর দিলে ওই মোটরবাইক আরোহীকে নিয়ে ফাঁড়িতে যেতে বলা হয়। এক সহকর্মীকে ডেকে তাঁকে নিয়ে ফাঁড়ির দিকে রওনা হতেই মোটরবাইক আরোহীর এক আত্মীয় এসে হাজির হন। ভুল লোককে ধরা হয়েছে বলে দাবি করতে থাকেন তাঁরা। তখন ফাঁড়ির নির্দেশে মোটরবাইকের নম্বর নিয়ে ও ছবি তুলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে মোটরবাইক নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় সাধপুকুর এলাকায় দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। তখনই নজরে পড়ে, একটি লাল রঙের মোটরবাইকে এক জন আসছে।
অনির্বাণের দাবি, মোটরবাইকটি এগিয়ে আসতেই ভাল করে নজর রাখতে শুরু করেন তিনি। মোটরবাইকটি কাছাকাছি আসতে মনে হয়, প্রজেক্টরে দেখানো আততায়ীর ছবির সঙ্গে এই মোটরবাইক আরোহীর চেহারার যথেষ্ট মিল রয়েছে। হাত দেখিয়ে দাঁড়াতে বলতেই মোটরবাইক আরোহী তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেই সময়ে রাস্তার পাশে তাঁর পরিচিতের মোটরবাইকের সঙ্গে ওই ব্যক্তির বাইকের ধাক্কা লাগে। রাস্তায় পড়ে গেলেও তড়িঘড়ি উঠে পালানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি দ্রুত তার মোটরবাইকের চাবিটি খুলে নেন, জানান অনির্বাণ।
অনির্বাণ জানান, মোটরবাইক আরোহীকে আটকে ফেলার পরে, তল্লাশি চালাতেই একটি বাজারের ব্যাগ মেলে। তাতে চেন, রড পাওয়া যায়। সেগুলি দেখেই কালনা থানা ও বুলবুলিতলা ফাঁড়িতে খবর দেন তিনি। তার পরে রাস্তাতেই ওই ব্যক্তিকে কড়া নজরে রাখেন। ১৮ মিনিটের মধ্যে কালনা থানার ওসি রাকেশ সিংহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।
এই কাজের জন্য ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুরস্কৃত করেছিল জেলা পুলিশ। অনির্বাণ বলেন, ‘‘অনেক পরিবারের সর্বনাশ করেছে ওই আততায়ী। তার ধরা পড়ার পরে অনেকে আমাকে বলেছিল, কয়েক বছর জেল খাটার পরে ছাড়া পেয়ে গেলে আমার উপরে হামলা চালাতে পারে। তবে প্রথম মামলাটিতেই আদালত তার ফাঁসির সাজা দিয়েছে। তাতে স্বস্তি পেয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আদালতের রায়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে, একটা ভাল কাজ করতে পেরেছিলাম। সে দিন ওকে ধরতে না পারলে হয়তো আরও কিছু মানুষের প্রাণ যেত।’’