প্রতীকী ছবি।
হুগলির মাহেশের পথেই হাঁটল দুর্গাপুরের ‘রথযাত্রা ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মন্দির চত্বরেই যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে সোসাইটির তরফে। গত শুক্রবার এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি সুভাষ বড়ুয়া।
এ বার দুর্গাপুরের রথযাত্রার উৎসবেও কাটছাঁট করা হয়েছে। গত ৩৮ বছর ধরে এই রথযাত্রার আয়োজন হয়ে চলেছে। প্রথম দিকে রথটি থাকত প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দিরের কাছে। সেখান থেকে বিগ্রহ নিয়ে রথ যেত সিএমইআরআই কালীবাড়িতে, জগন্নাথের মাসির বাড়িতে। উল্টোরথের দিন ফিরে আসত বিগ্রহ। রথযাত্রার সূচনা পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যাঁরা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভবানীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পরে রাজেন্দ্রপ্রসাদ অ্যাভিনিউয়ে মন্দির গড়ে ওঠার পরে, রথযাত্রার রুটের পরিবর্তন ঘটে। মন্দির থেকে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ রথে করে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় রাজীব গাঁধী ময়দানে। উল্টোরথের দিন সেখান থেকে ফের রথে চড়ে বিগ্রহ ফিরে আসে মন্দিরে।
প্রতি বছর রথের দিন বিকেলে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন মন্দিরের সামনে। রথের রশি টানার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। রাজীব গাঁধী ময়দান পর্যন্ত সেই ভিড় চলে যায়। বিগ্রহ যতদিন সে মাঠে থাকে, ততদিন বিশাল মেলা বসে। কয়েক হাজার দোকান বসে। বইমেলারও আয়োজন করা হয়। রথের মেলায় শুধু দুর্গাপুরের বাসিন্দারাই নন, পানাগড়, অণ্ডাল, রানিগঞ্জ থেকে মানুষজন এখানে ভিড় জমান। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। ভবানীপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘‘এ বার মেলা করার প্রশ্নই নেই। কারণ, প্রশাসনের অনুমোদন নেই। একই সঙ্গে কাটছাঁট করা হচ্ছে রথযাত্রার মূল অনুষ্ঠানেও।’’
মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি সুভাষ বড়ুয়া জানিয়েছেন, কাল, শুক্রবার স্নানযাত্রা। সে দিন মন্দির চত্বরের ভিতরেই স্নানের ব্যবস্থা করা হবে। এক সঙ্গে দশ জনের বেশি ভক্ত মন্দিরে ঢুকতে পারবেন না। সকলকে ‘মাস্ক’ পরে আসতে হবে। হাতশুদ্ধির (হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার) ব্যবস্থা রাখা হবে। তাঁরা ঢুকবেন লাইন দিয়ে, নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। সোসাইটির সদস্যেরা ছাড়াও বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা থাকবেন ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য। ২৩ জুন রথের দিন মন্দিরের সীমানার মধ্যেই মণ্ডপ বানিয়ে জগন্নাথের মাসির বাড়ি নির্মাণ করা হবে। মন্দির থেকে বিগ্রহ রথে বসিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
সুভাষবাবু বলেন, ‘‘মন্দির চত্বরের বাইরে রথ বেরোলেই আর সামাল দেওয়া যাবে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, মাসির বাড়িতে সাত দিন থাকার পরে, উল্টোরথের দিন মন্দিরে বিগ্রহ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে রথে করে। করোনা মোকাবিলায় খাদ্যসামগ্রী বিলির পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সোসাইটির তরফে মোট ৫০ হাজার টাকা দান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।