Christmas

বড়দিনের ভিড়ে মানা হল না করোনা-বিধি

ভিড়ের জন্য ভেঙে গিয়েছে সামাজিক দূরত্ব-বিধি ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৫
Share:

২৫ ডিসেম্বর উৎসবের আবহে পশ্চিম বর্ধমানের মাইথনে নৌকা-বিহারে পর্যটকেরা। তবে, অনেকেই লাইফ জ্যাকেট পরেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

করোনা আবহে স্বাস্থ্য-বিধি কার্যত উড়ে গেল শুক্রবার, বড়দিনে। গির্জা, শপিং মল— সর্বত্র ভালই ভিড় দেখা গিয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ কিংবা মাইথনে আবার নিরাপত্তা বিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে বড়দিনে পশ্চিম বর্ধমান জেলা দেখল নিয়মভাঙার নানা চিত্র।

Advertisement

গির্জার চিত্র: ভিড় এড়াতে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় গির্জা সিটি সেন্টারের ‘সেন্ট টেরেসা ক্যাথলিক চার্চ’ এ দিন বন্ধ রাখা হয়। তবে গির্জার বাইরে সামনের ফাঁকা জায়গায় যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়। গোশালা-সহ জিশুর জন্মবৃত্তান্ত ফুটিয়ে তোলা হবে মাঠের এক পাশে। এ ছাড়া, একটি উঁচু পাকা জায়গা গড়ে সেখানে মোমবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিকেলে গির্জায় গিয়ে দেখা গেল, মানুষজন এসেছেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আছেন পুলিশকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। তা সত্ত্বেও ভিড়ের জন্য সামাজিক দূরত্ব-বিধি ভেঙে গিয়েছে। ডিএসপি টাউনশিপের বি-জ়োন থেকে এসেছিলেন পবিত্র রায় ও স্নেহা রায়। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রতি বছর আসি। তাই এ বারও এসেছি। দু’টি করে মাস্ক পরে এসেছি। তবে এত ভিড়ে দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।’’ এ দিন মাঠে ঘুরে-ঘুরে সান্টা ক্লজ়েরা যেমন শিশুদে কোলে তুলে নিয়েছেন তেমনই তাঁরা মাস্ক বিলি করেছেন। ফাদার রাজ শেখর বলেন, ‘‘কাউকে গির্জার ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। সামাজিক দূরত্ব-বিধি মানার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে সবাই সুস্থ থাকেন। বাইরে মোমবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা করছে।’’ গির্জা সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বারের তুলনায় ভিড় এ বার কম ছিল।

শপিং মল: এ দিন বিভিন্ন শপিং মলে ব্যাপক ভিড় নজরে এসেছে। লকডাউনের পরে এত ভিড় এই প্রথম বলে জানিয়েছেন অনেকেই। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছে বিভিন্ন শপিং মল কর্তৃপক্ষকে। শপিং মলের তরফে দাবি করা হয়েছে, মাস্ক ছাড়া, কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া, গেটে জীবাণুমুক্ত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তো রয়েছেই। শপিং মলের কর্মীরা দূরত্ব-বিধি মেনে চলার আর্জি জানিয়েছেন বারবার।

Advertisement

পিকনিক স্পট: গত কয়েক দিন ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে ভ্রমণ কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনীয় কোভিড-বিধি মেনে চলার জন্য প্রচার করা হচ্ছিল। দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জটলা না করা, পিকনিকে এসে পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহার ইত্যাদি মেনে চলার অনুরোধ করা হয়। তার পরেও বিধিভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ দিন সকাল থেকে অনেকেই পিকনিক করতে চলে যান দুর্গাপুর ব্যারাজে। অন্য বারের তুলনায় সংখ্যায় যদিও তাঁরা অর্ধেকেরও কম। তাঁদের অনেকেই নেমেছিলেন নৌকাবিহারে। লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই, তাঁরা নৌকায় চড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌকার মাঝি বলেন, ‘‘এ বার ভিড় তেমন হবে না ধরে নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সে ভাবে নেওয়া হয়নি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ব্যারাজে পিকনিকে আসা মানুষজনকে নৌকায় চাপতে নিষেধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ কেউ চড়েছেন। ইংরেজি নববর্ষের দিন কড়া পাহারা থাকবে বলে দাবি পুলিশের। বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে বার্নপুরের নেহরু পার্ক বা মাইথনে। মাইথনেও অনেককেই লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নৌকায় দেখা গিয়েছে। সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা। তিনি বলেন, ‘‘যে সব পর্যটক বেনিয়ম করেছেন, তাঁদের সতর্ক করেছে পুলিশ।’’

রাজ্য সরকারের কোভিড ম্যানেজমেন্টের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, ‘‘এ দিন যে ধরনের ঢল নেমেছে, তা দেখে হতাশ হয়েছি। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য-বিধি উপেক্ষিত হয়েছে। এর পরে যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তা হলে আশ্চর্য হওয়ারকিছু নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement