এই ধরনের পাখিদের দেখা মিলছে কালনায়। নিজস্ব চিত্র
এত দিন বক, মাছারাঙাদেরই ভিড় ছিল কালনার ছাড়িগঙ্গায়। তবে এ বার ডিসেম্বরের শুরুতেই পরিযায়ী পাখিরা দখল নিয়েছে নদীর। ভোর হতেই ঘুরে ঘুরে জলে নামা, ভেসে বেড়ানো, দল বেঁধে উড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের। কচুরিপানার মধ্যে থেকে খাবার খুঁজে বেড়ানো পরিযায়ীদের নতুন ঠিকানা এটাই। শুক্রবার বন দফতরের দুই প্রতিনিধি ওই জলাশায় পরিদর্শন করেন। মহকুমাশাসক (কালনা) সুরেশকুমার জগৎ জানিয়েছেন, ছাড়িগঙ্গায় পরিযায়ী পাখিদের আসার বিবরণ দিয়ে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে জেলা বনাধিকারিককে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
কালনা শহর থেকে হাটকালনা পঞ্চায়েতের একাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছাড়িগঙ্গা। এক মাত্র বর্ষাতেই টইটুম্বুর থাকে এ নদী। বর্তমানে প্রচুর কচুরিপানাও রয়েছে নদীতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শীত পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে রংবেরঙের পাখি উড়ে আসছে। সব থেকে বেশি পরিযায়ী পাখি দেখা যাচ্ছে কালনা উপসংশোধনাগারের কাছাকাছি কংক্রিটের রাস্তা থেকে। সেখানে দাঁড়ালেই কানে আসছে পাখিদের কলরব। কালনা আদালত, মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে আসা বহু মানুষ পরিযায়ীদের দেখতে ওই রাস্তায় ভিড় জমাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার পাখিদের আনাগোনার খবর পান বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিংহ। দ্রুত একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর আশ্বাস দেন তিনি। শুক্রবার বন দফতরের দুই প্রতিনিধি ছাড়িগঙ্গা ঘুরে দেখেন। কোন, কোন পাখি এসেছে তা নজর করেন তাঁরা। প্রতিনিধি দলের এক জন রাজেন চন্দ্র বলেন, ‘‘কমন কুট, ক্রেস্টেড জাকানা, ব্রাঞ্চিং জাকানা, ওপেন বিলড স্টর্ক, পন্ড হেরন জাতীয় বেশ কিছু প্রজাতির পাখি আমরা দেখতে পেয়েছি। কালনার ছাড়িগঙ্গায় আগে কোনও দিন এই ধরনের পরিযায়ীদের দেখা যায়নি। ভাল সংখ্যায় পাখিদের আনাগোনা কালনার জন্য সুখবর। আশা করছি, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে।’’
কিন্তু হঠাৎ পথ বদলে কালনায় কেন পরিযায়ীরা? বন দফতরের দাবি, কোলাহল নেই এমন জায়গা পছন্দ করে পরিযায়ীরা। সেই দিক থেকে এই জায়গাটি আদর্শ। ছাড়িগঙ্গায় প্রচুর কচুরিপানাও রয়েছে। ফলে খাবার সংগ্রহ এবং ডিম পাড়তে পাখিদের অসুবিধা হচ্ছে না। মহকুমায় একমাত্র পাখিরালয় রয়েছে পূর্বস্থলীর চুপিতে। সেখানে না গিয়ে পাখিরা এ বার ছাড়িগঙ্গায় আসছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘চুপিতে নৌকার দাপাদাপি, পাখিদের ছবি তোলার জন্য ড্রোন ব্যবহার, পিকনিক করতে আসা দলের কোলাহলে পাখিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। তবে চুপিতে পাখি কমেছে কি না সেটা পাখি গণনা ছাড়া বলা সম্ভব নয়।’’ কালনার বাসিন্দা, পক্ষীপ্রেমী নব্যেন্দু পালও এ দিন এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গাডওয়াল, কটনটিল, লেসার হুইসেলিং ডাকের মতো বেশ কিছু প্রজাতির পাখি এসেছে। মহকুমায় আরও একটি পাখিরালয় তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনকে উদ্যোগী হয়ে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ শহরবাসীর দাবি, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য শীত পড়তেই প্রচুর পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় শহরে। পাখিরালয় গড়ে উঠলে শহরের আকর্ষণ আরও বাড়বে।