অভিযুক্ত শেখ মইনুদ্দিন।
তৃণমূলের শ্রমিক নেতার ‘দাদাগিরি’র জেরে বেশ কয়েকটি হিমঘর থেকে আলু বার করার কাজে সমস্যার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। এমনকি, দু’টি হিমঘরে কাজ বন্ধও হয়ে পড়েছে অভিযোগ করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন’ কৃষি বিপণন দফতর ও জেলাশাসককে (পূর্ব বর্ধমান) চিঠি দিয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক ঠিকাদার কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ মইনুদ্দিন তাঁদের শ্রমিকদের হুমকি দিচ্ছেন, কাজ করতে দিচ্ছেন না। ওই শ্রমিক নেতার সঙ্গে জামালপুরের এক হিমঘর মালিকের কথাবার্তার ‘ভিডিয়ো ক্লিপিং’ (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কাজে বাধার অভিযোগ উড়িয়ে মইনুদ্দিন অবশ্য দাবি করেন, স্থানীয় শ্রমিকদের উপেক্ষা করে অন্য জায়গার শ্রমিকদের সঙ্গে কাজের চুক্তি করেছেন হিমঘর মালিকেরা। তিনি তারই প্রতিবাদ করেছেন। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) এনাউর রহমান বলেন, ‘‘ওই চিঠি পেয়ে কৃষি বিপণন দফতরকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম। দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও সমস্যা নেই। সব হিমঘর খোলা রয়েছে।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিয়োয় হিমঘরের মালিককে বলতে শোনা যায়, ‘এ ভাবে হিমঘরের ভিতরে শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করলে, আপনার নামে এফআইআর করতে বাধ্য হব। আপনি এ ভাবে হিমঘরের ভিতরে ঢুকে হুমকি দিতে পারেন না। যা করার বাইরে করুন। আপনার যা সমস্যা অ্যাসোসিয়েশনকে জানান’। ওই নেতাকে পাল্টা বলতে শোনা যায়, ‘হঠাৎ সব কিছু হয়ে গেল, আমরা জানতে পারলাম না! আমরা বাইরে গেটে দাঁড়িয়ে থাকব। আপনারা বেরোতে পারবেন না’। বুধবার ওই হিমঘরের মালিক অনির্বাণ কুণ্ডুর দাবি, ‘‘আমরা প্রতিবাদ করেছি। সে জন্য কাজ চালু করা গিয়েছে। যাঁরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না, তাঁদের কাজ হচ্ছে না।’’ তিনি অভিযোগ করেন, ওই নেতার দৌরাত্ম্যে প্রতি বছর তাঁরা অতিষ্ঠ হন।
‘ওয়েস্টবেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্যের সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ সোমবার জেলাশাসককে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, সরকারের নির্দেশে হিমঘরগুলি থেকে আলু বার করার কাজ চলছে। সহায়ক মূল্যে আলু পাঠানো হচ্ছে ‘সুফল বাংলা’ স্টলে। এই পরিস্থিতিতে ওই নেতা কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন কর্মীদের। ফলে, আলু বার করতে সমস্যা হচ্ছে। এই চিঠির সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক ঠিকাদার কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিঠি। তাতে সংগঠনের নেতা মধুসূদন দাস জানান, ২৫ নভেম্বর দক্ষিণবঙ্গের হিমঘর শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্য স্তরের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তিই মানতে চাইছেন না জামালপুরের আইএনটিটিইউসি নেতা শেখ মইনুদ্দিন। তরুণবাবুর দাবি, ‘‘বুধবারেও জামালপুরের দু’টি হিমঘরে কাজ হয়নি।’’
অভিযুক্ত মইনুদ্দিন অবশ্য কোনও অভিযোগই মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় শ্রমিকদের বাদ দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও এক শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করেছেন হিমঘর মালিকেরা। আমাদের শ্রমিকদের কাজ, মজুরি বৃদ্ধি ও বোনাসের দাবি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছি। সে কারণেই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
হিমঘর মালিকদের একাংশের অভিযোগ, জেলা তৃণমূলের এক নেতার মদতেই মইনুদ্দিন ‘দৌরাত্ম্য’ চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মইনুদ্দিনকে আগেও সংযত হতে বলা হয়েছিল।’’ আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’