ফাইল চিত্র।
কাজের নিরিখে রাজ্যের অন্য জেলা পরিষদগুলিকে পিছনে ফেলে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় স্বশক্তিকরণ পুরস্কার’ পাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা পরিষদ। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরে ভাল কাজ করার জন্যই এই পুরস্কার মিলছে। ওই দু’টি জেলা পরিষদ ছাড়াও রাজ্যের আরও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ১০টি পঞ্চায়েত কেন্দ্রের কাছ থেকে পুরস্কার পাচ্ছে।’’ সপ্তাহখানেক আগে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব সুনীল কুমার চিঠি দিয়ে কোন পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ পুরস্কার পেতে চলেছে, তা জানান।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ২৪ মে ‘পঞ্চায়েত রাজ দিবস’ উপলক্ষে প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর জম্মু ও কাশ্মীরের সম্বা জেলার পালি পঞ্চায়েতে অনুষ্ঠান হবে। সরাসরি সেখানে কোনও প্রাপককে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ‘ভার্চুয়াল’ সভায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্তাদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে। জেলার মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অন্তত পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি পঞ্চায়েতে হাজির থাকার কথাও বলা হয়েছে। পুরস্কারমূল্য সরাসরি প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয় দেওয়া হবে, জানিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘ভাল কাজ করে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় শীর্ষে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। কাজের মান ধরে রাখাটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’
বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ও শিশুবান্ধব এলাকা গড়ায় কেন্দ্রের পুরস্কার পাচ্ছে মেমারি ২ ব্লকের বোহার ২ ও বিজুর ২ পঞ্চায়েতও। জেলা পরিষদের কর্তা (আইএসজিপি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ বছর আমাদের জেলার ১৫৪টি পঞ্চায়েত ও বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতি মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। বিজুর ২ পঞ্চায়েতের কাজ খতিয়ে দেখে গিয়েছিলেন কেন্দ্রের দল। পরের বছর যাতে আরও ভাল করে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়, সেই উদ্যোগ করা হবে।’’
এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে পরিকল্পনা বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখোর ১ ব্লকের গোয়াগাঁও ২ পঞ্চায়েত। ‘নঞ্জিমুখ রাষ্ট্রীয় গৌরব গ্রামসভা পুরস্কার’ পাচ্ছে বীরভূমের ইলামবাজার। ব্লকস্তরে স্বশক্তিকরণ পুরস্কার পাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট ১ ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ১ ব্লক। পঞ্চায়েতস্তরে ওই পুরস্কার পেতে চলেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বালসি ২ পঞ্চায়েত ও পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভগবন্তপুর ২ পঞ্চায়েত।
প্রতি বছর সার্বিক উন্নয়নের নিরিখে রাজ্যের একটি বা দু’টি জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েতকে পুরস্কৃত করে কেন্দ্র। পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি কোনও একটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের বিষয়ও বিবেচিত হয়। গ্রাম সংসদের সভা ডাকা থেকে শুরু করে পানীয় জল, রাস্তাঘাট, শৌচাগার নির্মাণের নথি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। ৫৬টি বিষয়ের উপরে তথ্য, ছবি, ভিডিয়ো আপলোড করতে হয়। আবেদন খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ব্লক, পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে জেলা এবং জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন সেরাদের নাম পাঠায় কেন্দ্রীয় স্তরে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ কমিটি মনোনয়নগুলি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার পরে পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হয় নাম। বিজুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের মতো পিছিয়ে থাকা পঞ্চায়েতও যে সরকারি নির্দেশিকা মেনে কাজ করলে পুরস্কার পেতে পারে, তা দেখা গেল।’’