‘ছোট শহর’ নামেই, নেই নিকাশি-জল

২০১১ সালের জনগণনার এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, দ্রুত গতিতে ‘নগরায়ন’ হলেও শহুরে জনসংখ্যার একটা বড় অংশ আজও নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এখনও এই সব ছোট শহরে সন্ধে নামলেই রাস্তাঘাট অন্ধকারে ডুবে যায়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৮:১০
Share:

ফাইল চিত্র।

জেলায় ছোট শহরের (‌সেনসাস টাউন) সংখ্যা গত তিন দশকে বেড়েছে ১৫টি। অথচ, এই তিরিশ বছরে পুরসভায় উন্নীত হয়েছে মাত্র ২টি এলাকা।

Advertisement

২০১১ সালের জনগণনার এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, দ্রুত গতিতে ‘নগরায়ন’ হলেও শহুরে জনসংখ্যার একটা বড় অংশ আজও নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। এখনও এই সব ছোট শহরে সন্ধে নামলেই রাস্তাঘাট অন্ধকারে ডুবে যায়। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে বেহাল হয়ে পড়ে যোগাযোগ। যেখান-সেখান জঞ্জালও পড়ে থাকে।

কাটোয়া শহর লাগোয়া পানুহাট এখনও পঞ্চায়েত এলাকা। বস্ত্রবিপণী থেকে শুরু করে ইমারতি সামগ্রী সব কিছুর দোকান রয়েছে। রাস্তার ধারে বড় বাজার তৈরি হয়েছে, ব্যাঙ্ক-স্কুলও রয়েছে। কিন্তু পানীয় জল, নিকাশির মতো নাগরিক পরিষেবা থেকে পিছিয়ে রয়েছে পানুহাট। ১০০ দিনের কাজে সম্প্রতি নিকাশি ও রাস্তাঘাটের উপর জোর দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলছেন বাসিন্দারাই। জানা যায়, ওই এলাকাকে কাটোয়া পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

Advertisement

প্রশ্ন হল, ‘শহুরে’ দেখতে হলেই কী সেনসাস টাউনের মর্যাদা পাওয়া যায়? জনগণনার রিপোর্ট অনুযায়ী, সেনসাস টাউন হতে গেলে পাঁচ হাজারের বেশি বাসিন্দা থাকতে হবে। তার মধ্যে অকৃষিকাজে যুক্ত থাকবেন ৭৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়ও প্রতি কিলোমিটারে জনঘনত্ব হবে ৪০০ —এ ধরনের মানদন্ড পার করলে তবেই ওই এলাকাকে ‘সেনসাস টাউন’ আখ্যা দেবে সরকার। সেই হিসেবে ১৯৮১ সালে সাবেক বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় গুসকরা ও মেমারিকে ‘সেনসাস টাউন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়ছিল। বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা ও দাঁইহাটের পর ১৯৮৮ সালে গুসকরা পুরসভা হয়। তারপরে মেমারিও পুরসভার স্বীকৃতি পায়। কিন্তু আর কেউ পুরসভা হয়নি।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বর্ধমানের কাছে মির্জাপুর, গাংপুর যেমন তালিকায় রয়েছে তেমনি আছে বুদবুদ, গলসি ১ ব্লকের সুকদল। রায়নার সেহেরাবাজারের সঙ্গে ধাত্রীগ্রাম, গোপীনাথপুর, উত্তর গোয়ারা, শ্রীরামপুর, সমুদ্রগড়, হাটশিমলাও ‘সেনসাস টাউনের’ আখ্যা পেয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের খেদ, বিভিন্ন প্রকল্পে রাস্তাঘাট, পথবাতি ও আবর্জনা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা বিক্ষিপ্ত। বাড়ি তৈরিতেও কোনও নিয়মকানুনের বালাই নেই। বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, “গ্রামীণ এলাকাতেও ভ্যাট তৈরি, আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সব জায়গায় তো বাড়ি বাড়ি ময়লা আনার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। ফলে পুরসভা তৈরির দাবি থাকে।” তবে কর বাড়বে বলে অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা পুরসভা গঠনে আপত্তিও জানান। রাজ্যের এক আধিকারিকের কথায়, “পুরসভায় উন্নীত করতে গেলে অনেক নিয়মকানুন ও পরিকাঠামো তৈরির জন্য প্রচুর টাকা লাগে। সেই টাকা কোথায়?” জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “পুরসভা উন্নতীকরণের কোনও প্রস্তাব নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement