দুর্গাপুরে বেনাচিতির আনন্দনগরে সৌরভকুমার আচার্যের বাড়ি থেকে কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসছেন সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা। ছবি: বিকাশ মশান ।
আয়কর হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে শুরু হল সিবিআই তল্লাশি। বৃহস্পতিবার বার্নপুর ও দুর্গাপুরে তিনটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। তার মধ্যে রয়েছে এক প্রাক্তন সিআইএসএফ কনস্টেবলের বাড়িও। এক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গিয়েছেন সিবিআই অফিসারেরা।
বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালানোর জন্য বুধবারই আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিল সিবিআই। জানা গিয়েছিল, কয়লা পাচার মামলায় মোট ১৩টি জায়গায় তল্লাশির পরোয়ানা নেওয়া হয়েছিল। তবে এ দিন রাজ্য জুড়ে এই মামলায় ১২ জায়গায় তল্লাশির খবর মিলেছে। তার মধ্যে বার্নপুরের রামবাঁধে দু’জনের বাড়িতে তল্লাশি হয়। বাড়ি দু’টি রাস্তার দু’প্রান্তে মুখোমুখি। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পাঁচটি গাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সাত জন অফিসারের একটি দল অভিযানে আসে। দু’টি বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু হয়। সিবিআই সূত্রে জানা যায়, প্রাক্তন ওই সিআইএসএফ কনস্টেবল মালদহের রতুয়ায় ভাইঝির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন। তাঁর রতুয়ার বাড়িতেও এ দিন তল্লাশি চলে। তিনি আগে ইসিএলের নানা খনিতে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়।
বার্নপুরের অপর যে ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি হয়, তিনি বাড়িতে ছিলেন। দুপুর ১টা নাগাদ তিন সিবিআই অফিসার তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। আটক ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমার স্বামীকে সিবিআই নিয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, তাঁর স্বামী ওই প্রাক্তন সিআইএসএফ কনস্টেবলের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা করেন। কী ব্যবসা, সে প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘‘আমার স্বামী অন্দরসজ্জার কাজ করেন।’’
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই ব্যক্তিরই বেশ বড় বাড়ি। স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, আটক হওয়া ব্যক্তির পরিবার আগে তেমন সচ্ছ্বল ছিল না। হঠাৎই তাঁরা ‘ফুলেফেঁপে’ ওঠেন। এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজন থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মোটা টাকা সাহায্যও করেন বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। ওই সিআইএসএফ কনস্টেবল অবশ্য এলাকাবাসীর সঙ্গে তেমন মিশতেন না বলে দাবি। তাঁর বাড়ির চারপাশ উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। বড় চারটি লোহার গেট রয়েছে। বছর চারেক আগে বাড়িটি তৈরি করা হয় বলে দাবি বাসিন্দাদের। দামি গাড়িতে চেপে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিয়ে ওই ব্যক্তিকে যাতায়াত করতে দেখা যেত বলেও দাবি কয়েক জনের।
এ দিন সকাল থেকে দুর্গাপুরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেনাচিতির আনন্দনগরে একটি বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালায়। বাড়িতে ভাড়া থাকেন বিহারের এক বাসিন্দা। প্রায় ৫ ঘণ্টা তল্লাশি চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির মালিক সপরিবার দোতলায় থাকেন। নীচে ভাড়া থাকেন ওই ব্যক্তি। বাড়ির মালিকপক্ষের দাবি, নিজেকে পরিবহণ ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচয় দিয়ে ২০১৮ সালে বাড়ি ভাড়া নেন ওই ব্যক্তি। তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, কয়লা পাচারের তদন্তেই এ দিন এই তল্লাশি চলে। ওই ব্যক্তি বেআইনি কয়লা কারবারে অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বলেও অভিযোগ। তিনি যদি সত্যিই পরিবহণ ব্যবসায়ী হন, তবে কী তাঁর পরিবহণ সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বেআইনি কয়লা পরিবহণ হত, প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও তল্লাশি শেষে বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে বেরোনোর সময়ে সিবিআই অফিসারেরা কোনও উত্তর দিতে চাননি।