অবৈধ ভাবে তোলা হয়েছে কয়লা। নিজস্ব চিত্র।
কয়লা পাচার মামলায় তদন্ত শুরু করার পরে সিবিআই উল্লেখ করেছে, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ইসিএলের ‘লিজ় হোল্ড’ এলাকায় প্রায় তিন হাজার অবৈধ খাদান খুঁড়ে কয়লা চুরি করা হয়েছে। শুধু অবৈধ খাদান থেকে চুরি নয়, ইসিএলের কয়লাও চুরি করে পাচার করত ‘সিন্ডিকেট’, দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই অভিযোগ করেছে, খাদানগুলির সিংহভাগ খোঁড়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের কুনস্তরিয়া, পাণ্ডবেশ্বর, সাতগ্রাম, সালানপুর, সোদপুর এরিয়া এবং ঝাড়খণ্ডের মুগমা ও রাজমহল এরিয়ায়। অনুপ মাজি ওরফে লালার সঙ্গে এই কয়লা কারবারের সিন্ডিকেটে সঙ্গী ছিলেন গুরুপদ মাজি, জয়দেব মণ্ডল ও নীরোদ মণ্ডল ও নারায়ণ খড়কা। সিবিআই অফিসারদের দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, তিন জন অবৈধ কয়লা তোলার দায়িত্ব সামলাতেন। চোরা কারবার সামলাতে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে টাকা পৌঁছনোর দায়িত্বে ছিলেন এক জন। চোরাই কয়লা ডাম্পার ও ট্রাকে পাচারের কাজ করতেন আর এক ব্যক্তি।
চার্জশিটে সিবিআই উল্লেখ করেছে, ২০২১ সালেই মুগমা এরিয়ার নিরশা, শ্যামপুর এ কলিয়ারি লাগোয়া ভুঁইয়াডিহি, পাহাড়িবস্তি, ফাটকা জোড়ি, উত্তর লায়েকডিহি, বোদনা, চাপাপুর ভালুকসোদা এলাকার নানা অবৈধ খাদান নিরীক্ষণ করা হয়। খনির আধিকারিক ও স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে অবৈধ সিন্ডিকেটের বিশদ হদিস মেলে। একই ভাবে, আসানসোল-রানিগঞ্জের হরিপুর, খোট্টাডিহি, লছিপুর, টপলাইন, বক্তারনগর-সহ সাতগ্রাম ও পাণ্ডবেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকার অবৈধ খাদানগুলি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার সময়ে সিবিআই অফিসারেরা বিস্মিত হন দুর্গাপুর মহকুমার হরিশপুর লাগোয়া সিঙ্গারণ নদীর কিয়দংশ দখল করে নদীগর্ভ খুঁড়ে কয়লা তোলার ঘটনায়। প্রথম চার্জশিটে সিবিআই উল্লেখ করেছে, অবৈধ কয়লা পাচার কাণ্ডে লালার কাছে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ইসিএলের প্রাক্তন সিএমডি-সহ মোট ১০ জন বর্তমান ও প্রাক্তন আধিকারক, কর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮ জন জামিনে মুক্ত আছেন, দু’জন এখনও জেলবন্দি।
চার্জশিটে সিবিআই আরও উল্লেখ করেছে, শুধু অবৈধ খাদান থেকে কয়লা চুরিই নয়, ওই ‘সিন্ডিকেট’ বিভিন্ন উপায়ে ইসিএলের বৈধ কয়লা চুরি করে পাচার করত। প্রথমত, কোলিয়ারির ডিপো থেকে ডাম্পারে বোঝাই করার সময়ে ‘কাঁটা মাস্টারের’ সঙ্গে যোগসাজশ করে কয়লা ওজনে কারচুপি করে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি তোলা হতো। ডাম্পার বোঝাই কয়লা নির্দিষ্ট স্থানে পরিবহণের সময়ে মাঝ রাস্তায় কিছু কয়লা নামিয়ে নিত অবৈধ কারবারিরা। অনেক সময়ে, ওজনের সমতা আনতে ডাম্পারের কয়লায় পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে দেওয়া হত। দ্বিতীয়ত, কোলিয়ারির ডিপো থেকে রেলের সাইডিংয়ে কয়লা মজুত করার পরে বেআইনি কারবারিরা রেল এবং ইসিএলের কিছু কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ করে তার একাংশ চুরি করে পাচার করত। এক সময়ে বারাবনির চরণপুর রেল সাইডিং থেকে প্রায় ১,৮১৭ টন কয়লা চুরি যায়। চোরাই কয়লার হদিস পেতে পাণ্ডবেশ্বরের ডালুরবাঁধ ও দক্ষিণ শ্যামলা কলিয়ারির পুরুষোত্তমপুর রেল সাইডিংয়ে অভিযানও চালায় সিবিআই। তদন্তে নেমে সিবিআই প্রায় ১৭ জন রেলকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। (চলবে)