জামালপুর-কেতুগ্রামে পৌঁছল দল, বর্ধমানে দুই মামলার তদন্তভার
CBI

CBI: সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতায় প্রশ্ন তৃণমূলের

জামালপুরে নিহত বিজেপি সমর্থকের পরিবারের দাবি, তাদের কথা সে ভাবে শোনেননি সিবিআই আধিকারিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২১ ০৬:১০
Share:

বাঁ দিকে, জামালপুরে এক নিহতের বাড়িতে সিবিআই আধিকারিকেরা। ডান দিকে, কেতুগ্রামের শ্রীপুরে তদন্তে দল। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

আদালতের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের তদন্তে পূর্ব বর্ধমানে পৌঁছল সিবিআই। রবিবার জামালপুর ও কেতুগ্রামে আসে সিবিআইয়ের দল। এ ছাড়া, বর্ধমানে দু’টি মামলার তদন্তভারও হাতে নিয়েছে সিবিআই। এরই মধ্যে, জামালপুর ও কেতুগ্রামে নিহত বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে গেলেও, নিহত তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা না যাওয়ায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। জামালপুরে নিহত বিজেপি সমর্থকের পরিবারের দাবি, তাদের কথা সে ভাবে শোনেননি সিবিআই আধিকারিকেরা।

Advertisement

ভোটের ফল বেরনোর পর দিন, ৩ মে জামালপুরের নবগ্রামে নিহত হন বিজেপি কর্মী আশিস ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল। অভিযোগ, বাড়িতে হামলা চালিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে খুন করা হয়। এর পরেই ওই গ্রামে বিভাস বাগ ও শাজাহান শা নামে দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন। রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ কাকলিদেবীর বাড়িতে পৌঁছন সিবিআইয়ের চার সদস্য। মৃতার স্বামী অনিলবাবু সিবিআই আধিকারিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ভোটের পর দিন আক্রমণ করে ‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা’। তাঁর পায়ে টাঙি দিয়ে আঘাত করা হয়। স্ত্রী ছুটে তাঁকে বাঁচাতে গেলে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। বসন্ত পাকড়ে নামে এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, “ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে তাণ্ডব শুরু হয়। প্রচুর লোককে গ্রামছাড়া করা হয়।’’

ছেলে আশিস এখনও ঘরছাড়া বলে দাবি করেন অনিলবাবু। ছোট ছেলে, নবম শ্রেণির ছাত্র দীপঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। ঘটনার সাক্ষী হিসেবে নাম থাকা এক মহিলার সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। বেশ কয়েকজনের বক্তব্য লিপিবদ্ধ ও ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। সিবিআই চলে যাওয়ার পরে অবশ্য অনিলবাবু দাবি করেন, ‘‘ওঁরা তো আমাদের কথা সে ভাবে শুনলেনই না!” নিহত তৃণমূল কর্মী বিভাস বাগ ও শাজাহান শায়ের পরিজনের দাবি, তাঁরা আশা করেছিলেন, তাঁদের বাড়িতেও সিবিআই আসবে। বিভাসের স্ত্রী ঝর্নাদেবীর দাবি, ‘‘কোলের বাচ্চা, শ্বশুর-শাশুড়িকে আছি। স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের শাস্তি চাই। সিবিআই আমাদের কথা কেন শুনবে না?’’ একই প্রশ্ন শাজাহানের পরিবারেরও।

Advertisement

এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সিবিআইয়ের চার সদস্য কেতুগ্রামের শ্রীপুর গ্রামে পৌঁছন। ভোটের ফল বেরনোর পরে এই গ্রামে সংঘর্ষ হয়। বলরাম মাঝি নামে বিজেপি কর্মী এক যুবককে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। বলরামের মা টুম্পা মাঝি এ দিন সিবিআই আধিকারিকদের কাছে কাঁদতে-কাঁদতে অভিযোগ করেন, ‘‘খুনিরা তৃণমূলের আশ্রয়ে রয়েছে বলে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’ সিবিআই কর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। পরিবারের দাবি, উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস পেয়েছেন। পুলিশ অবশ্য জানায়, এই ঘটনায় অভিযোগে পাঁচ জনের নাম ছিল। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে।

কেতুগ্রামে শ্রীপুর লাগোয়া মালগ্রামে ভোটের ফল বেরনোর পরে খুন হন তৃণমূল কর্মী শ্রীনিবাস ঘোষ। এ দিন তাঁর বাড়িতেও যায়নি সিবিআইয়ের দল। গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘একই যাত্রায় পৃথক ফল হওয়ার জন্যই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এরাও (সিবিআই) বিজেপির হয়ে কাজ করছে।’’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘সিবিআই তদন্তে তৃণমূল অশনি সংকেত দেখছে। তাই এ সব বলছে।’’ এ দিন সিবিআই দলের কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘ওঁরা (সিবিআই আধিকারিকেরা) যেখানে যাবেন, সাহায্য করার জন্য আমার প্রস্তুত রয়েছি। এ ব্যাপারে ওঁরা আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান থানা ও দেওয়ানদিঘি থানার দু’টি মামলার তদন্তভার নিল সিবিআই। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল বর্ধমানের কাঞ্চননগরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। নারায়ণ দে নামে এক যুবক আহত হন। বিজেপির দাবি, তিনি তাদের কর্মী ছিলেন। ৬ মে তাঁর মৃত্যু হয়। ২৪ জুন তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা দে অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ ছাড়া, ২০ মে দেওয়ানদিঘির টুব গ্রামে সোম হাঁসদা (২৬) নামে এক জনের গাছে ঝুলন্ত দেহ মেলে। ২৩ মে পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দু’টি ঘটনার তদন্তভার নেওয়ার বিষয়ে সিবিআইয়ের তরফে পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়। মামলার নথিপত্র সিবিআইকে দেওয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের তরফে দু’টি মামলার নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement