নববর্ষের ক্যালেন্ডার
সামনেই নববর্ষ। ভোটের মরসুমে নতুন বছরের বাংলা ক্যালেন্ডার দিয়ে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানালেন সিপিএমের মহিলা সমিতির শহর লোকাল কমিটির সদস্যেরা। সোমবার বিকেলে কালনা শহরের চকবাজার এলাকা থেকে তিনটি টোটো নিয়ে দলীয় প্রার্থী সুকুল শিকদারের প্রচারে বের হন তাঁরা। যেখানেই ভিড় দেখেছেন সেখানেই টোটো থেকে নেমে প্রচার সেরেছেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল ছোট ছোট ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডারের এক দিকে রয়েছে কালনা বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আর্জি। আর এক দিকে রয়েছে ১৪২৩ সালের ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডারের নীচেও লেখা রয়েছে ‘নিজের ভোট নিজে দিন/ ভোট লুঠ রুখে দিন।’
কেন এমন প্রচার? দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, সামনেই পয়লা বৈশাখ। তার আগে অনেকেই বাংলা ক্যালেন্ডার হাতে পেতে চান। ভোটকে সামনে রেখেই সেটাই মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হল। পকেটে আর ছোট করার কারণ অনেকেই পকেটে ক্যালেন্ডার রাখতে চান। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগের বার পুরভোটে শহরে শাসক দল ব্যাপক ভোট লুঠ করে। সে জন্যই ক্যালেন্ডারের নীচে ভোট লুঠ রুখে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।’’
কীর্তনের আসরে প্রার্থী
এত দিন ঢাক-ঢোল নিয়ে প্রচারে বেরোতে দেখা গিয়েছে প্রার্থীদের। এ বার প্রচারের ফাঁকে কীর্তনের আসরে ঢুকে নিজেই খোল বাজালেন মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজা। সোমবার মন্তেশ্বর এলাকায় প্রথমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আয়োজিত একটি ভোটপ্রচার মূলক মিছিলে হাঁটেন তিনি। এরপরেই আচমকা চলে যান স্থানীয় একটি কীর্তনের আসরে। সেখানে ঢুকেই একটি খোল চেয়ে নেন তিনি। তারপরে ছন্দে ছন্দে দুলে বেশ কিছুক্ষণ তা বাজান। তৃণমূল প্রার্থীর আচমকা এমন ভূমিকায় অনেকে হকচকিয়ে যান। যদিও সজলবাবু বলেন, ‘‘কীর্তন ভালবাসি। তাই আসরে গিয়ে একটু খোল বাজালাম।’’
প্রার্থী ৮৩
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে বর্ধমান গ্রামীণের চার মহকুমায় সব দল মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩ জন। তার মধ্যে খণ্ডঘোষে রয়েছেন ৪ জন, মেমারিতে ৬ জন, বর্ধমান দক্ষিণে ৬ জন, রায়নায় ৩ জন, জামালপুরে ৬ জন, মন্তেশ্বরে ৬ জন, কালনায় ৫ জন, পূর্বস্থলী উত্তরে ৬ জন, কাটোয়ায় ৬ জন, কেতুগ্রামে ৪ জন, বর্ধমান উত্তরে ৫ জন, ভাতারে ৫ জন, পূর্বস্থলী দক্ষিণে ৮ জন, মঙ্গলকোটে ৫ জন, আউশগ্রামে ৫ জন ও গলসিতে রয়েছেন ৩ জন।
ঘোড়সওয়ার
ঘোড়ানাচ, বাজনায় প্রচার করলেন কাটোয়ার কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদার। সোমবার কাটোয়া লাগোয়া কোশিগ্রাম, ননগর, সুরুরা, গোয়াইয়ে প্রায় ২০০ জন কর্মীদের নিয়ে প্রচার মিছিল করেন তিনি। দলীয় পতাকার চেয়ে লাল পতাকাতেই ছেয়ে গিয়েছিল মিছিল। মিছিলের শুরুতে ঘোড়ানাচ দেখে জনৈক ভোটারের মন্তব্য, ‘‘ঘোড়ায় চেপে ঘোড়সওয়ারের মতোই ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছেন উনি।’’
পথসভায় বাধা, ক্ষোভ বিজেপির
প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হলেও তৃণমূলের বাধায় পথসভা না করতে পারছেন না। এই অভিযোগে সোমবার রানিগ়়ঞ্জ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মণীশ শর্মার নেতৃত্বে প্রায় এক ঘণ্টা রানীগঞ্জ থানায় বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। মণীশবাবুর দাবি, রবিবার চিনকুঠি মোড়, মহাবীর কোলিয়ারি এলাকায় তাঁদের পথসভা করতে দেয়নি স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। বেশ কয়েকটি জায়গায় তাদের পতাকা, ব্যানারও খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয় হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। বিক্ষোভের জেরে থানার সামনে রাস্তায় যানজট শুরু হয়। বিপাকে পড়েন পথচারী ও ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশের তরফে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভ উঠে যায়।
শেষে প্রতীক পেলেন অনিল
আগের দিন হাতে এসেও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল প্রতীক। গোষ্ঠীকোন্দলে দলের এক সহকর্মীই না কি সরিয়ে রেখেছিলেন তা। অবশেষে দলের উপরতলার নির্দেশে প্রতীকের ওই বি ফর্ম হাতে পেলেন কাটোয়ার বিজেপি প্রার্থী অনিল দত্ত। সোমবার বেলা ১২টার মধ্যে তা জমাও দিয়ে দেন তিনি।
গত শুক্রবার ওই ফর্ম দিতে যাওয়ার পথে দলের বর্ধমান পূর্বের পর্যবেক্ষক অলোক কুণ্ডুর সামনেই তা খোওয়া যায়। অভিযোগ, কাটোয়া শহর সভাপতি অচিন্ত্য ঘোষই তা সরিয়ে ফেলেন। হন্যে হয়ে ফর্ম খোঁজার পরে অচিন্ত্য-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগও করা হয় দলের তরফে। যদিও অনিলবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত অচিন্ত্য গোষ্ঠীর বক্তব্য ছিল, গোড়া থেকেই অনিল দত্তের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। দলের বহু সদস্যই তাঁকে প্রার্থী হিসেবে চান না। প্রতীকের ফর্ম হারানোর পরে অনিলবাবুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখান বিজেপির একাংশ কর্মীরা। তবে শেষমেশ রাজ্য বিজেপির নির্দেশে যাঁরা ওই ফর্ম নিয়েছিলেন তাঁরা অলোকবাবুকে তা ফেরত দেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অনিল দত্তও। আর অচিন্ত্য বলেন, ‘‘রাজ্য কমিটির নেতারা বলেছিলেন, ফর্ম ফেরত দিলে মিথ্যে অভিযোগটি তুলে নেওয়া হবে। সেই শর্তেই ফেরত দিয়েছি। যদিও রাত পর্যন্ত তা তোলা হয়নি বলে জেনেছি।’’ অভিযোগ তোলা না হলে অন্যরকম পদক্ষেপ করা হবে, বলেও অচিন্ত্যবাবুর দাবি।
সাইকেলে প্রচার
প্রায় শ’চারেক মহিলা কর্মী-সমর্থক নিয়ে বুদবুদের দেবশালা গ্রামে রবিবার প্রচার সারেন আউশগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী অভেদানন্দ থান্দার। ফুল ছুঁড়ে, শাঁখ বাজিয়ে প্রার্থীকে বরণ করে নেন গ্রামের মহিলারা। শনিবার অভেদানন্দবাবু দেবশালা প়ঞ্চায়েতের ধানতোড়, রাঙাখুলা গ্রামে সাইকেলে চেপে প্রচার সারেন।
ঢাকের তালে
সামনে দশ জন মহিলা ঢাকি। তার পেছনে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দূর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। এভাবেই সোমবার ধান্ডাবাগের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার সারলেন বিশ্বনাথবাবু। মিছিলে ছিল বাম ও কংগ্রেস, উভয় দলের কর্মীরাই।
মোট প্রার্থী ৮৩
মনোনয়ন জমার শেষ দিনে বর্ধমান গ্রামীণের চার মহকুমায় সব দল মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩ জন। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ জন প্রার্থী পূর্বস্থলী দক্ষিণে। ৬ জন করে রয়েছেন বর্ধমান দক্ষিণ, মেমারি, পূর্বস্থলী উত্তর ও কাটোয়ায়। গলসিতে রয়েছেন ৩ জন প্রার্থী।