বাস নেই বর্ধমানের আলিশা বাসস্ট্যান্ডে। টোটো করে গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষা। — নিজস্ব চিত্র।
বাসের আকালের ইঙ্গিত শনিবারই পেয়েছিলেন নিত্যযাত্রীরা। রবিবার সকালে একাধিক ট্রেনও গেল তৃণমূলের ‘দখলে’। বর্ধমান-হাওড়া সুপারেও সাধারণ যাত্রীরা উঠতে পারেননি বলে অভিযোগ। যাঁরা ট্রেন ‘দখল’ করে একুশে জুলাই কলকাতার ধর্মতলার সভায় গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই টিকিট কাটেননি। দলনেত্রীর ছবি দেওয়া ব্যাজই যেন তাঁদের টিকিট। এ দিকে বাস না চলায় নানা জায়গায় বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে টোটো, ছোট ট্রাকের বিরুদ্ধে।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “বিনা টিকিটে অনেক যাত্রী রবিবার হাওড়া এসেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। টিকিটি কেটে এলে ভাল করতেন।” রেলের দাবি, শুধু লোকাল ট্রেনে নয়, বিনা টিকিটে সংরক্ষিত কামরাতেও অনেকে বর্ধমান থেকে হাওড়া গিয়েছেন। পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, এ দিন ট্রেনে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করলেও অন্য রবিবারের তুলনায় টিকিট বিক্রি কম হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘২১ জুলাই আমাদের কাছে আবেগ। তৃণমূলের বাইরেও অনেক মানুষ ধর্মতলায় যান। সবাই শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে, নিয়ম মেনেই গিয়েছেন।”
এ দিন সকালে বর্ধমান স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাসের নেতৃত্বে তৃণমূলের ‘ব্যাজ’ বিলি করা হচ্ছে। ব্যাজ নিয়ে টিকিট কাউন্টারমুখো না হয়ে সকলেই স্টেশনের ভিতর ঢুকে যান। ব্যাজ বিলি চলাকালীন এক কাউন্সিলরকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা সবাই দিদির ডাকে ধর্মতলায় যাচ্ছেন। রেলের কেউ বাধা দিলে আমাদের ফোন করবেন।” পাশে থাকা আর এক নেতাও বলেন, “ব্যাজ দেখিয়ে বলবেন, দিদির ডাকে কলকাতা যাচ্ছি।” বিধায়ক, কাউন্সিলেরাও ট্রেনেই হাওড়া যান এ দিন।
সকাল থেকে বর্ধমান শহরেও বাস ছিল নামমাত্র। বাস মালিকদের দাবি, জেলা জুড়ে বড় রুটের বাস চলাচল করেনি। লোকজনও রাস্তায় ছিল না। সেই কারণে মিনি বাসগুলি কলকাতায় না গেলেও চলেনি। আলিশা ও নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডও কার্যত ফাঁকা ছিল। আলিশা বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাঁকুড়ার শঙ্কর রুইদাস। নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন সীমান্তনী মুখোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, “বাস চলবে না জানতাম। কিন্তু এতটা দুর্ভোগ হবে বুঝিনি।’’ কাটোয়া ও কালনা বাসস্ট্যান্ডেও বাস কম ছিল। মেমারি ও মঙ্গলকোটের নতুনহাট বাসস্ট্যান্ড থেকেও কোনও বাস চলােনি। আইএনটিটিইউসি-র কালনা শহরের নেতা শক্তি সাহা বলেন, “কালনা শহর থেকে বেশির ভাগই ট্রেনে হাওড়া গিয়েছেন। তবে গ্রাম থেকে কিছু বাসও গিয়েছে।’’ কালনা-মেমারি, কালনা-বেঁচি, কালনা-বর্ধমান রুটেও বাস চলেনি বলে অভিযোগ। সবমিলিয়ে ছুটির দিনেও যাত্রীদের দুর্ভোগ কম হয়নি।
বাস মালিকদের দাবি, গুরু পূর্ণিমা ও বৃষ্টির জন্য রবিবার রাস্তায় লোক কম ছিল। তবে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁরা অসুবিধার মধ্যেই পড়েছেন। ফায়দা তুলেছেন টোটো চালকেরা। কোথাও কোথাও ছোট ট্রাক চালকেরাও। কাটোয়ার নিবারণ দত্ত বলেন, “ব্যবসার জন্য কেতুগ্রামের পাঁচুন্দিতে যাওয়ার ছিল। বাস না পেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ছোট ট্রাকে করে গন্তব্যস্থলে গিয়েছি। সময় ও অর্থ দুই নষ্ট হয়েছে।” টোটো চালকেরা বর্ধমানের তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় ৪০ টাকা, সগড়াই ৬০ টাকা, খণ্ডঘোষ পর্যন্ত ১০০ টাকা ভাড়া নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আবার পালসিট থেকে উল্লাস পর্যন্ত ৫০ টাকা, উল্লাস থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। খণ্ডঘোষের শিবাজি দত্ত, সগড়াইয়ের রেহেনা সুলতানার দাবি, তাঁরা কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ টিউশন নিতে বর্ধমানে এসেছিলেন। অন্য দিনের তুলনায় তিন গুণ টোটো ভাড়া দিতে হয়েছে। টোটো চালকদের অবশ্য দাবি, বৃষ্টির মধ্যে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়ে ফাঁকা টোটো নিয়ে ফিরতে হয়েছে। তাই যাতায়াতের ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলামের দাবি, “আমরা সরকারি বাস ভাড়া করেছিলাম। রবিবার ছুটির দিন। সব রুটেই বেসরকারি বাস থাকার কথা। কাজেই দুর্ভোগের অভিযোগ সবটা ঠিক নয়।”