এই ডাকঘরটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৩-তে। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ হতে চলেছে বার্নপুর বাজার ডাকঘর। বার্নপুরের ইস্কো কারখানার নিজস্ব ভবনে চলা এই ডাকঘরটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে ডাকঘর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ। এর পরেই সেটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন প্রায় এক হাজার গ্রাহক।
ডাকঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩-তে। ডাকঘর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সে সময় শ্রমিকদের ডাকঘরের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের কাছে ডাকঘর তৈরির প্রস্তাব দেয় ইস্কো। ইস্কো ডাকঘর ভবনটিও তৈরি করে দেয়। কিন্তু এখন সেটিই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন? সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পোস্ট (আসানসোল) দেবব্রত বসু জানান, সম্প্রতি ইস্কো তাঁদের চিঠি লিখে জানিয়েছে, যে ভবনটিতে ডাকঘর চলছে, সেটি জরাজীর্ণ। যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে পড়তে পারে। তাই কোনও রকম বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই, ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে যেন ভবনটি খালি করা হয়। দেবব্রতের দাবি, “ইস্কো বিকল্প কোনও ভবন দেওয়ার কথা জানায়নি। তাই, বিপদের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে ডাকঘরটি বন্ধ করা ছাড়া দ্বিতীয় রাস্তা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
ইস্কো-র জেনারেল ম্যানেজার (এস্টেট) ভাস্কর কুমারের দাবি, ভবনটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, সংস্কার করার মতোও পরিস্থিতি নেই। তবে তাঁর সংযোজন, “ডাকঘর কর্তৃপক্ষের বিকল্প ঘরের দরকার হলে নিয়ম মতো তাঁরা ইস্কো-র কাছে লিখিত জানাতে পারেন। তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।”
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় এক হাজার জন গ্রাহক আছেন, যাঁরা ‘মাসিক আয় প্রকল্প-নিধি’র অধীনে রয়েছেন। ফলে, ডাকঘর বন্ধ হলে সমস্যা হবে। শিবস্থানের বাসিন্দা অশীতিপর বিতান রুদ্র বলেন, “বাড়ির কাছেই ডাকঘরটি ছিল। হেঁটেই এমআইএস-এর টাকা আনতে পারতাম। জানি না, এ বার কী হবে।” কেএস টাইপ আবাসন অঞ্চলের বাসিন্দা তীর্থঙ্কর দেব জানান, বাড়ির কাছে একটি ডাকঘর ছিল বলে বহু কাজই সহজে হয়ে যেত। এখন ডাকঘরটি বন্ধ হয়ে গেলে আতান্তরে পড়বেন তাঁরা। দেবব্রত জানিয়েছেন, এই ডাকঘরের স্থায়ী আমানতকারীরা চাইলে তাঁদের বার্নপুরের মুখ্য ডাকঘরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে।
ডাকঘর ও ইস্কো-র কাছে ডাকঘরটি বন্ধ না করার আর্জি জানিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অশোক রুদ্র। তিনি বলেন, “ইস্কো ও ডাকঘর, দু’টিই কেন্দ্রের সংস্থা। দেশের নাগরিকদের সুবিধার জন্য এই দুই সংস্থা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা করতেই পারে।” তাঁর প্রস্তাব: বার্নপুর বাজার এলাকায় ইস্কো-র ফাঁকা আবাসনেই ডাকঘরটি স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ডাকঘর কর্তৃপক্ষের।