বাঁ দিকে, সহজ-পাঠের সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র
কারও বাবা-মা নেই। কেউ ঘরহারা। তবে ঠিকানা এক, বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। সেখানেই ওই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার আলো জ্বেলেছেন এক দল শিক্ষক। ৭৩তম স্বাধীনতা দিবসও ওই শিশুদের সঙ্গেই উদযাপন করেন তাঁরা।
বছর দেড়েক ধরে সপ্তাহ দু’দিন, স্কুল ছুটির পরে বর্ধমান স্টেশনের আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওই পথশিশুদের পড়ান তাঁরা। কর্মশালার নাম ‘সহজ পাঠ’। ওই শিক্ষকদের মধ্যে তাপস পাল, সঞ্জয় সাহা, স্বপন মালিকেরা জানান, দেড় বছর ধরে তাঁরা অনেক কষ্টে এই ছেলেমেয়েদের পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছেন। তবে বেশির ভাগেই আঁকার ঝোঁক বেশি। তাপসবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম পড়াশোনা চালানো যাবে না। কিন্তু এখন দেখছি ওরাই আগ্রহী হয়ে ক্লাসে হাজির হয়ে যায়।’’
বৃহস্পতিবার স্টেশন চত্বরে ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পুরুলিয়ার এআই (সেকেন্ডারি) শুভাশিস বক্সী, সমাজসেবী অরুণ আগরওয়াল, চণ্ডী দাস গুপ্ত প্রমুখ। হোয়াইট-বোর্ড, চেয়ার টেবিল, জলের ফিল্টার-সহ নানা জিনিস দেন তাঁরা। বিলি করা হয় টিফিন। কলেজ সৌরভ ভট্টাচার্য, নিত্যানন্দ দাস, কৌশিক চৌধুরীরাও খাতা, পেনসিলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস দেন কচিকাঁচাদের। পড়ুয়া শাহজাহান শেখ, সোহেল শেখ, সুন্দরী বোসেরা বলে, ‘‘এখন আমরা ছবি আঁকতে পারি। ‘আমরা সবাই রাজা’ গাইতে পারি।’’
বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকায় জন্মেছিলেন তিন বিপ্লবী, রাসবিহারী বসু, রাসবিহারী ঘোষ এবং বটুকেশ্বর দত্ত। তাঁদের পরিচয়, তাঁদের অবদান জানাতে স্বাধীনতা দিবসে ছাত্রছাত্রীদের সেখানে নিয়ে যায় বর্ধমানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সহযোগিতা করে ‘ভারত স্কাউট অ্যান্ড গাইডে’র বর্ধমান সদর অ্যাসোসিয়েশনও। ১০টি স্কুলের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৫০ জন পড়ুয়াকে বাসে করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি। পরে যাওয়া হয় রায়নার সুবলদহ গ্রামে রাসবিহারী বসুর বাড়ি। ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। ওই সংগঠনের সম্পাদক চরণ ভুঁইমালী জানান, বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচিত করার দায়িত্ববোধ থেকে এই উদ্যোগ।