দেবী দুর্গার আগমনে পরিবেশিত হয় ডান্ডিয়া নাচ বা ডান্ডিয়া রাস। —নিজস্ব চিত্র।
খানাপিনা হোক বা পরিধেয়, দুর্গাপুজোর ক’দিন সবেতেই তো বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে বর্ধমান রাজবাড়িতে যেন উলটপুরাণ! পুজোর আগে থেকেই রাজবাড়ির মন্দির প্রাঙ্গণে বসে ডান্ডিয়া নাচের আসর। নবমী পর্যন্ত সেই আসরের সৌজন্য রাজবাড়িতে যেন একটু গুজরাত উঠে আসে।
প্রায় দুশো বছর আগে বর্ধমানের ক্ষমতার দখল নিয়েছিল পঞ্জাবের কপূর পরিবার। কালক্রমে রাজত্ব গেলেও সে পরিবারের সদস্যরা বর্ধমান রাজবাড়িতেই থেকে গিয়েছেন। যদিও গুজরাত, রাজস্থান, পঞ্জাব-সহ উত্তর ভারতের একাংশের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে তাঁদের। ফলে এককালে ওই রাজ্যগুলির বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই বর্ধমানে বসবাস করছেন। তবে আজও নিজস্ব সংস্কৃতি বা লোকাচার পালন করতে ভোলেন না। গুজরাতের লোকনৃত্যের আসরও যেন তারই বাহক।
বস্তুত, গুজরাতে এবং রাজস্থানের একাংশে ডান্ডিয়া নাচ এবং নবরাত্রির অনুষঙ্গ দীর্ঘদিনের পুরনো। দেবী দুর্গার আগমনে পরিবেশিত হয় ডান্ডিয়া নাচ বা ডান্ডিয়া রাস। বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষীনারায়ণ জিউয়ের প্রাচীন মন্দিরে প্রতি বছর মহালয়ার পরের দিন থেকে এই নাচের আসর বসে। যা সমাপন হয় নবমীতে। গত তিন দশকের বেশি এ ভাবেই নবরাত্রি পালিত হচ্ছে বর্ধমান রাজবাড়িতে। এ আসরের অন্যতম অংশগ্রহণকারী রাজেশ কোটাক বলেন, ‘‘রাজপরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়েই গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই ডান্ডিয়া নাচের আয়োজন করা হচ্ছে। কয়েক দিনের জন্য মনে হয় যেন গুজরাতেই রয়েছি।’’ নবরাত্রিতে নাচের আসরে এসে আপ্লুত রাজবাড়ির আর এক বাসিন্দা সুমিতা কোটাকও। তিনি বলেন, ‘‘কিছু সময়ের জন্য হলেও যেন নিজের সংস্কৃতিকে ফিরে পাই।’’