ফাইল চিত্র
অসুস্থ অবস্থায় এক অন্তঃসত্ত্বাকে পরিবারের লোকজন নিয়ে আসার পরে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (বিএমসিএইচ) বিরুদ্ধে। সৌমি ঘোষ নামে ওই অন্তঃসত্ত্বাকে ভর্তি নেওয়া যেতে পারত, প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন হাসপাতালের কর্তারা। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছে বলে দাবি বিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষের।হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রসূতি বিভাগ থেকে কোনও রোগিণীকে অন্য কোনও ওয়ার্ডে পাঠানো হলে, জুনিয়র চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলক ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে রোগিণী যাতে চিকিৎসার সুব্যবস্থা পান, সেটা দেখা সংশ্লিষ্ট জুনিয়র চিকিৎসকের কর্তব্যের মধ্যে পড়বে। হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘প্রসূতি বিভাগকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
মেমারির শঙ্করপুরের বাসিন্দা প্রণব ঘোষ মেমারি থানা এবং বিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর মেয়ে, প্রায় সাত মাসে অন্তঃসত্ত্বা সৌমিকে ১০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত অন্তত চারটি হাসপাতাল ও একাধিক নার্সিংহোমে নিয়ে গেলেও কেউ ভর্তি নেয়নি। বিএমসিএইচ-এ নিয়ে গেলে এক জুনিয়র ডাক্তার ‘ভাল হাসপাতালে’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে তাঁর দাবি। জেলাশাসক বিজয় ভারতীর উদ্যোগে পরে বিএমসিএইচ-এ সৌমিকে ভর্তি করানো হলেও কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।
বিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তদন্তে জানা গিয়েছে, বুকে যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হতে আসা ওই অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা প্রসূতি বিভাগে হতে পারত। এ ছাড়া, দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রাথমিক ভাবে বিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, উল্লাস মোড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ‘কোভিড’ পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল রোগিণীর পরিবারকে। সৌমির পরিজন সেখান থেকে বিএমসিএইচ-এ নিয়ে আসেন। সেখানেও ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি করার কথা বলা হয়। কিন্তু সৌমির পরিজনেরা তাতে ফের ‘ভয়’ পেয়ে গিয়েছিলেন বলে দাবি। বিএমসিএইচ-এর এক শীর্ষ কর্তা দাবি করেন, ‘‘করোনা নিয়ে মানুষের মনে এখনও ভয় রয়েছে। ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি রাখার কথা বলতেই সৌমির বাড়ির লোকজন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এ ধরনের ভয় কাটাতে পরিজনকে দায়িত্ব নিয়ে বোঝাতে হবে, সে কথাও প্রতিটি ওয়ার্ড ও বিভাগকে বলে দেওয়া হয়েছে।’’ ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি হলে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়তো ঘটত না, মনে করছেন হাসপাতালের কর্তারা। সৌমির বাবা প্রণববাবুর অবশ্য দাবি, হাসপাতালে কেউ তাঁদের ‘সারি’ ওয়ার্ডে যেতে বলেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাতে হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে জরুরি রোগীদের সামাল দেন দু’জন চিকিৎসক। সৌমির পরিজনদের অভিযোগ, প্রসূতি বিভাগে গিয়েও ডাক্তারের জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ রকম অভিযোগ কেন উঠল, সংশ্লিষ্ট বিভাগ হাসপাতালের সুপারের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অন্তত এক জনও যাতে রোগীকে পরিষেবা দেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাতে অনেক মহিলা নানা অসুখ নিয়ে প্রসূতি বিভাগে আসেন। তাঁদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। এ বার থেকে প্রসূতি বিভাগের এক জন জুনিয়র চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেবেন। সুপার প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘কোনও কারণে ওই ওয়ার্ড ভর্তি নিতে অস্বীকার করলে, রোগিণীকে প্রসূতি বিভাগেই ভর্তি করা হবে। মেডিসিন বিভাগের সাহায্যে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগিণীর অবস্থা স্থিতিশীল হলে, দিনের বেলা নির্দিষ্ট চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হবে।’’