পর্যটকের সমাগম হবে, এই আশায় নৌকা মেরামত করে রাখছেন চালকেরা। মাইথনে রবিবার। ছবি: পাপন চৌধুরী।
ডিসেম্বরে দেখা নেই পর্যটকদের। তাই মুখ ভার মাইথন পর্যটনকেন্দ্রের নৌকা চালকদের। করোনা-আবহের কারণে, শীতের রোদও বরাকর নদের পাড়েই উল্টো করে রাখা নৌকাগুলি। এই পরিস্থিতি কবে বদলাবে, এখন সে দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, প্রতি বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত এখানে পর্যটকেরা ভিড় জমান। এখানকার মূল আকর্ষণ, মাইথন জলাধার, সিদাবাড়ি, বাথানবাড়ি, আনন্দদ্বীপ-সহ বরাকর নদের উপরে গজিয়ে ওঠা টিলার আশপাশে দিনভর নৌকা ভ্রমণ। পর্যটকদের নৌকা ভ্রমণ করানোর জন্য এলাকায় রয়েছেন প্রায় তিনশো জন নৌকা চালক।
নৌকা চালকদের সংগঠন ‘মাইথন বোটম্যান ট্রান্সপোর্ট কোঅপারেটিভ সোসাইটি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, নৌকা চালকদের প্রতি দিন গড়ে ৩০০-৫০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু এ বার হাল খুব খারাপ। ৫০ টাকাও আয় হচ্ছে না, জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান রহমত আলি। প্রায় তিন দশক ধরে এই পেশায় থাকা বাবলু মির্ধা বলেন, ‘‘গত বছরও দম ফেলার সময় ছিল না। কিন্তু এ বার ঘাটে নৌকা বেঁধে দিনভর অপেক্ষা করছি, কবে একজন পর্যটকের দেখা মেলে।’’
রুস্তম আনসারি নামে এক নৌকা চালক জানান, নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে এখানে নৌকো ভ্রমণের ব্যবস্থা শুরু হয়। প্রথম দিকে, হাতে গোনা কয়েকজন নৌকা চালাতেন। পরে, পর্যটনকেন্দ্র ও নৌকা ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ে। ভাল রোজগারের আশায় সিদাবাড়ি, বাথানবাড়ি, কালীপাথর-সহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা এই পেশায় আসেন।
মাইথন জলাধারটুকু ছাড়া, পর্যটন কেন্দ্রের বাকি অংশ সালানপুর ব্লকের অন্তর্গত। নৌকা ভ্রমণ ও নৌকা চালকদের সুবিধার জন্য তাঁদের প্রায় ১০টি প্যাডেল ও মোটর বোট দেওয়া হয়েছে, দু’টি জেটি ও সিদাবাড়ি, বাথানবাড়িতে ঘাট বানানো হয়েছে বলে জানান সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা ঘাষি কর্মকার।
কিন্তু করোনা আবহে এই পেশায় সঙ্কট দেখা দেওয়ায় তাঁদের সংসার চলছে কী ভাবে? নৌকা চালকেরা জানান, তাঁদের এলাকায় বিকল্প কোনও আয়ের ব্যবস্থা নেই। নীলমাধব টুডু নামে এক নৌকা চালক বলেন, ‘‘দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা। সরকারি রেশনে সংসার চলছে। কিন্তু এই নির্ভরতাটা ভাল লাগছে না।’’ সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতি জানিয়েছে, সরকারের তরফে রেশন-সহ অন্য সাহায্য করা হচ্ছে নৌকা চালকদের।