দুর্গাপুরে ডিটিপিএস কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ বিএমএস শ্রমিক সংগঠনের কর্মীদের। বুধবার। ছবি: বিকাশ মশান
বেছে বেছে তৃণমূলের সমর্থক ‘ছাঁটাই’ শ্রমিকদের কাজে ফেরানো হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের সমর্থকদের কাজে ফেরানো হচ্ছে না— এই অভিযোগ তুলে বুধবার দুর্গাপুরের ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘ডিটিপিএসের’ গেটে বিক্ষোভ দেখাল বিএমএস। সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থা ও তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দুর্গাপুরের মায়াবাজারে ডিভিসি ১৯৬৬-তে ডিটিপিএস গড়ে তোলে। বর্তমানে উৎপাদনহীন ডিটিপিএস। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ডিভিসি নতুন ৮০০ মেগাওয়াটের পঞ্চম ইউনিট গড়ার তোড়জোড় করছে। সে জন্য জমি ঘেরার কাজ চলছে প্রাথমিক পর্যায়ে। একই সঙ্গে, জায়গা ফাঁকা করার জন্য বন্ধ চতুর্থ ইউনিটের ‘কাটিং’ শুরু হয়েছে। একটি ঠিকা সংস্থা সে কাজ করছে। সেই কাজে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছে আরএসএস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস।
বুধবার সকাল থেকে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তাঁর অভিযোগ, এই কারখানা বাঁচানোর জন্য বিজেপি সাংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অথচ, বিএমএসের কাউকে কাজে না নিয়ে, শুধু রাজ্যের শাসক দলের লোকজন কাজ পাচ্ছেন। লক্ষ্মণের কথায়, “অর্ধেক কর্মী নিতে হবে বিএমএস থেকে। কারখানা সম্প্রসারণ করতে হলে বিএমএস সমর্থক শ্রমিকদেরও কাজে নিতে হবে। তৃণমূল নেতাদের মদতে কাজ করলে আন্দোলন হবে। অন্যথায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কয়েক মাস আগে চতুর্থ ইউনিট স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কর্মহীন হয়ে পড়েন ঠিকা শ্রমিকেরা। তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দরকার হলে ফের কাজে ডাকা হবে। অভিযোগ, সম্প্রতি তৃণমূলের তরফে জমা দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মোট ৮০ জনকে কাজে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএমএসের তরফে জমা দেওয়া ১৯ জনের এক জনকেও নেওয়া হয়নি। কাজ হারানো প্রবীণ ঠিকা শ্রমিক যুগল চক্রবর্তীর দাবি, “চতুর্থ ইউনিটে ২০২৫-র মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। আচমকা কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন কাটিংয়ের কাজে তৃণমূলের ৮০ জন সুযোগ পেলেন। বিএমএসের কাউকে নেওয়া হল না। এর আগে তিন বার কর্তৃপক্ষকে কাজের দাবি জানিয়েছি আমরা।”
কর্তৃপক্ষের দাবি, কাটিংয়ের কাজের দায়িত্বে রয়েছে ঠিকা সংস্থা। ওই ঠিকা সংস্থার অবশ্য দাবি, কে বা কারা কোন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তা দেখে কাজে নেওয়া হয় না।
তৃণমূলের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি লোকনাথ দাসের দাবি, শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর দাবি জানিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই দাবি মেনে সম্প্রতি ৮০ জনকে কাজে ফেরানো হয়েছে। এখনও প্রায় আড়াইশো জন কাজ পাননি। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, “বিজেপির পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভের নাটক করছে। যাঁদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকেই অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক।”