কারখানায় বিজেপির বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগ নিয়ে বিজেপির বিক্ষোভকে ঘিরে তেতে উঠল দুর্গাপুরের নামো সগড়ভাঙার একটি বেসরকারি কারখানা চত্বর। স্থানীয় লোক নিয়োগের দাবিতে সোমবার বিকেলে গ্রাফাইটের ইলেকট্রোড ও কার্বনের নানা সামগ্রী উৎপাদনকারী ওই কারখানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। কারখানার রক্ষীকে কার্যত ঠেলে সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি বাধে। পরে গেটের সামনে সভা করেন বিজেপি নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই ওই কারখানায় স্থানীয় লোক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারখানার সামনে মিছিল করে তারা। শুক্রবার কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। রবিবার ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় যুবকদের একাংশ সঞ্জীব সরণিতে ঠিকাদার সংস্থার কার্যালয়ের সামনে কাজের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপির দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের যোগসাজসে একতরফা ভাবে বিজেপি সমর্থক বেকারদের বঞ্চিত করে বহিরাগত ও তৃণমূলের লোকদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল যদিও তা মানতে চায়নি।
এ দিন সগড়ভাঙা লাগোয়া বেসরকারি কলেজের সামনে থেকে মিছিল করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা ওই কারখানায় যান। ছিলেন বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা, সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক অভিজিৎ দত্তেরা। কিছু বিক্ষোভকারী কারখানার ভিতরে ঢুকতে চান। পুলিশ এসে বাধা দিলে গোলমাল বাধে। এর পরে কারখানার সামনে সভা থেকে লক্ষ্মণ অভিযোগ করেন, জেলার দুই মন্ত্রীর সহযোগিতায় দু’দিন আগে রাতের অন্ধকারে কারখানায় ১০ জন বহিরাগতকে কাজে ঢোকানো হয়েছে।
লক্ষ্মণের অভিযোগ, ‘‘যখনই জানতে চেয়েছি, বলা হয়েছে কারখানায় নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত করেছেন কর্তৃপক্ষ। টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের কাজে নেওয়া হচ্ছে। অথচ, স্থানীয় বেকারেরা কাজ পাচ্ছেন না।’’ তাঁর দাবি, কারখানায় নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক শ্রমিক বিজেপি এবং বিএমএস থেকে নিতে হবে। এ দিন ওই কারখানার আইএনটিটিইউসি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ রমজানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন লক্ষ্মণ। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিক নিয়োগের নামে কয়লা, বালি, গরু পাচার করে, তোলাবাজি করে বছরের পর বছর বহু টাকা লুট করেছেন রমজান। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৃণমূলের কার্যালয় তৈরি করছেন, দলকে টাকা দিচ্ছেন। সব তদন্ত হবে। ইডি বাড়িতে হিসাব নিতে যাবে।’’
রমজানের পাল্টা দাবি, ‘‘কোনও বেআইনি কাজ হয়নি। কারখানায় ২৮ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষজনই কাজ পেয়েছেন। যে ১০ জন সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাও স্থানীয়। বিজেপি ইডি পাঠাতেই পারে। কৈফিয়ত দেব।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেকারদের কর্মসংস্থানে রাজ্য সরকার তৎপর। লোকসভা ভোটের আগে প্রাসঙ্গিক থাকতে এ সব ভিত্তিহীন কথা বলছে বিজেপি।’’
রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘স্থানীয় ছেলেরা কে কোন দল করেন, সে সব না দেখে, দশ জনকে অস্থায়ী কাজ দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে নয়, দিনের আলোয় তাঁরা কাজে ঢুকেছেন। এর পরেও কারও অসুবিধা থাকলে তা জানাতে পারেন। কিন্তু বিক্ষোভের নামে গায়ের জোর দেখানো অর্থহীন।’’ কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি তাঁদের হাতে নেই। ঠিকাদার সংস্থা প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিকের জোগান দেয়।